আপত্তিকর মন্তব্যে মামলা, ফেসবুক লাইভে ক্ষমা চাইলেন নুর

Post Image

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের পর এবার লাইভে এসে ক্ষমা চেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক সহ সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর। ‘যারা আ.লীগ করে তারা মুসলমান নয়’- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া নিজের এমন বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।

এর আগে নুরের এমন বক্তব্যে শাহবাগ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা তথ্য-প্রযুক্তি আইনে নুরকে একমাত্র আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মো. আশরাফুল ইসলাম সজীব বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মামুন অর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গতকাল রোববার রাতে ‘নানান মানুষ নানান মত, দেশ বাঁচাতে ঐক্যমত। সার্বিক পরিস্থিতিতে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বার্তা’ ক্যাপশন দিয়ে ফেসবুক লাইভে আসেন নুর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে বক্তব্যে দেওয়াকে কেন্দ্র করে দেশের কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে তার জন্য ক্ষমা চান তিনি।

লাইভের শুরুতে নুর বলেন, আমি ১৬ তারিখের লাইভে অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে বলেছিলাম, আপনি নিজে রোজা থাকবেন কিন্তু অন্যকে রোজা থাকতে দেবেন না, অধিকার আদায়ের কথা বললে দমন-নিপীড়ন করবেন, কারাগারে নেবেন, অসুস্থ মানুষকে কারাগারে ওষুধ পর্যন্ত পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবেন না। এসব কাজ কোনো মুসলমান সমর্থন করতে পারে না। সরকার এগুলো করে থাকলে, অবশ্যই এগুলো জঘন্য কাজ। মানবতাবিরোধী এমন কাজের সমালোচনা করা উচিত। এ ঘটনাগুলো ব্যাখ্যা করার জন্য স্বাভাবিকভাবে রাগ-ক্ষোভ থেকে ওইদিন কিছু কথা বলেছিলাম। আমি মনে করি আওয়ামী লীগে অবশ্যই ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাই-বোনেরা আছেন, হিন্দু-খ্রিস্টান ভাই-বোনেরা আছেন। আমি সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ঢালাওভাবে আক্রমণ করে কোনো কথা বলিনি।

সাবেক ডাকসু ভিপি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের মধ্যে আমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমি চাইব না তারা আমার প্রতি ক্ষুব্ধ হোক। ১৬ তারিখে দেওয়া বক্তব্যের জন্য কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি ১৭ তারিখ লাইভেও এটা বলেছি, আবারও বলছি। সেদিনের লাইভের বক্তব্যের জন্য কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। মানুষ মাত্রই ভুল, তাই আমার ভুলের জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। ওই বক্তব্যকে পুঁজি করে হয়রানি করার জন্য মামলা করা পুরোপুরি একটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র শুধু আমার বিরুদ্ধে নয়, এদেশের গণতন্ত্রের জন্য যারা লড়াই-সংগ্রাম করছে তাদের বিরুদ্ধেও হচ্ছে।

এদিকে শাহবাগ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা তথ্য-প্রযুক্তি আইনে নুরকে একমাত্র আসামি করে দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর তার ফেসবুক পেজ থেকে কোনো মুসলমান আওয়ামী লীগ করতে পারে না, যারা আওয়ামী লীগ করে তারা ধান্দাবাজ, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, চিটার, বাটপার, প্রকৃত কোনো মুসলমান আওয়ামী লীগ করতে পারে না, এদের কোনো ইমান নাই, শুক্রবার এক দিন নামাজ পড়তে যাবে আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কোনো খবর নাই, আওয়ামী উগ্রবাদীরা আলেম ওলামাদের চরিত্র হরণ করে। ইত্যাদি উস্কানিমূলক আক্রমণাত্মক বক্তব্য প্রদান করে। যা সারা বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান কর্মী সমর্থকদের ধর্মীয় মূল্য বোধ ও অনুভূতিতে আঘাত হানে। এমন বক্তব্যের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক আইন-শৃংখলার অবনতি, বিভিন্ন সম্প্রদায় ও শ্রেণির মধ্যে শত্রুতা, বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়েছে। এর মাধ্যমে নুর তার সহযোগীদেরকে আইনের আওতায় আনা গেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান কর্মী সমর্থকদের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও দেশের সামগ্রিক আইন-শৃংখলা রক্ষা করা সম্ভব হবে।

মামলার বিষয়ে আশরাফুল ইসলাম সজীব বলেন, গত কয়েকদিন আগে নুরুল হক নুর লাইভে এসে সাম্প্রদায়িক উস্কানীমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। ডাকসুর একজন ভিপির এ ধরনের বক্তব্য রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। ডাকসুর একজন ভিপি যদি এ ধরনের বক্তব্য করে তাহলে তার কাছ থেকে তরুণ প্রজন্ম কি শিখবে? তার এ ধরনের বক্তব্যের কারণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও নষ্ট হতে পারে। এ আশঙ্কা থেকে মামলাটি করা হয়েছে।

মামলার বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন অর রশিদ বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উস্কানীমূলক বক্তব্যের দায়ে নুরুল হকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম সজীব এ মামলা দায়ের করেন।’