সুখের আশা অর্থনীতিতে

Post Image

   অর্থনীতিতে আরও সুখের আশা
• নতুন বছরের শুরুতেই দায়িত্ব নিচ্ছে নতুন সরকার
• ব্যবসায়ীরাও বাড়তি প্রত্যাশার কথা বলছেন
• ইশতেহার অনুযায়ী দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযান 
• সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা
• ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি ও এক দরজায় সেবা চালু
• অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নেওয়া 
• ব্যবসার খরচ কমানো ও জ্বালানির দাম সহনীয় রাখা

দেশের অর্থনীতির স্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে নতুন বছর শুরু হচ্ছে। রপ্তানি খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে, প্রবাসী আয় বাড়ছে, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত খুবই ভালো অবস্থায়। বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব আসছে। আর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা স্বস্তি দিচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এমনই এক সুখকর অবস্থায় দেশে টানা তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার।   
ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন বছর ও নতুন সরকার মিলিয়ে তাঁদের প্রত্যাশা বেশি। প্রত্যাশাগুলো অবশ্য বেশির ভাগই পুরোনো—ব্যবসা সহজ করা, ব্যবসার খরচ কমানো, করব্যবস্থা সহজ করা, অবকাঠামো উন্নতি, জ্বালানির ব্যবস্থা করা, সুদের হার সহনীয় রাখা। এর সঙ্গে নতুন একটি প্রত্যাশা যোগ হয়েছে আওয়ামী লীগের ইশতেহার থেকে। ব্যবসায়ীরা চান, নতুন বছরে নতুন সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযান শুরু করুক।

জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই নতুন বছরে সরকার তার ইশতেহারে করা অঙ্গীকার অনুযায়ী দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযান শুরু করুক।’ তিনি ব্যবসা সহজ করা, সময়ের কাজ সময় অনুযায়ী শেষ না করলে জবাবদিহি নিশ্চিত করা, হয়রানিমুক্ত করব্যবস্থা নিশ্চিত করা, বিনিয়োগে উৎসাহ, বেসরকারি ব্যাংকেও ঋণের সুদের ৯ শতাংশ নামিয়ে আনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে জোর দেওয়ার আহ্বান জানান।

শফিউল ইসলাম বলেন, নতুন সরকার অনেক উন্নয়নকাজ হাতে নেবে। এ জন্য প্রচুর পয়সার প্রয়োজন হবে। ব্যবসায়ীরা যাতে হয়রানিমুক্ত পরিবেশে কর দিতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি।

সরকারের চলতি মেয়াদে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের কাছাকাছিতে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব বেড়েছে। এফবিসিসিআই সভাপতি মনে করেন, কর্মসংস্থানের জন্য বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস-বিদ্যুতের দামের ক্ষেত্রেও মধ্যমেয়াদি একটি প্রক্ষেপণ থাকা দরকার। তিনি বলেন, যদি জ্বালানির দামের একটি প্রক্ষেপণ থাকে, তাহলে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ পরিকল্পনা সহজ হয়।

সরকার গত কয়েক বছরে বেশ কিছু কাজ গুছিয়ে এনেছে, যার সুফল পাওয়া যেতে পারে চলতি বছর। এর মধ্যে অন্যতম ব্যবসায়ীদের জন্য এক দরজায় সেবা বা ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) চালু করা। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ওএসএস চালুর ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে গেছে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সদ্য বিদায়ী সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ‘আমরা চাই ওএসএস দ্রুত চালু হোক। পাশাপাশি সেটার সুফল নিশ্চিত করতে হবে। এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসা সূচকে আমরা উন্নতি চাই।’ তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক উন্নতি এই সরকারের একটি বড় শক্তি। সেটা এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

আবুল কাসেম খান মনে করেন, বড় ব্যবসায়ীরা নানাভাবে অর্থের জোগান নিশ্চিত করলেও বিপাকে থাকেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। তাঁদের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে তাঁরা সহজে ঋণ পান। ব্যাংক খাতের অনিয়ম ও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে ব্যাংক কমিশন গঠনের দাবিটি আবারও তুলে ধরেন তিনি।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে যে রাজনৈতিক সহিংসতা হয়েছিল, তার বড় ভুক্তভোগী ছিল পোশাক খাত। এবার সেটা হয়নি। নির্বাচনের দিন বেশ কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও সার্বিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়েনি। ফলে নির্বাচন ঘিরে প্রতিবার যে অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়, তা থেকে মুক্ত ছিলেন ব্যবসায়ীরা।

জানতে চাইলে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। আমরা আশা করব নতুন বছরে এবং পরবর্তীতে এমন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে।’

টানা তিনবার নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় বর্তমান সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সরকারের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা বেড়েছে। আশা করব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যাশা পূরণ করবেন।’ তিনি অবকাঠামোর উন্নতি, সুশাসন নিশ্চিত করাসহ বেশ কয়েকটি প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন। বন্দর নিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। তবে দেশের রপ্তানি বাড়ছে। তাতে যেন চাপ তৈরি না হয়, সে জন্য বে টার্মিনাল নির্মাণ দ্রুত শেষ করতে হবে।