মানুষের দেহকে প্রতিদিন পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে গোসল বা স্নান। অনেকেই জানেন না যে, প্রতিদিন ঠিকমতো গোসল করা না হলে শরীরে বিভিন্ন জটিল সমস্যা হতে পারে। শরীরে দুর্গন্ধ, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা এর মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া শরীরকে শিথিল ও সতেজ রাখতেও গোসলের ভূমিকা অনন্য। তাই আপনি যদি প্রতিদিন গোসল করে তাহলে কিছু জটিল রোগও দূরে থাকতে বাধ্য হয়।
এর সাথে বলা যেতেই পারে নিয়মিত সকাল-বিকাল গোসল করলে আয়ু বাড়ে চোখে পড়ার মতো। এবার দেখা যাক, নিয়মিত গোসল করলে কী কী উপকার পাওয়া যাবে। চলুন দেরি না করে এখনই জেনে নেই:
(১) ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়: শুনে অবাক হবেন, নিয়মিত গোসল করলে ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে স্মৃতিশক্তি এবং বুদ্ধির বিকাশ বারে। গবেষণায় দেখা গেছে, গোসল করার সময় ব্রেনের ভেতর ইনফ্লেমেশন রেট কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে নার্ভাস সিস্টেমেরও কর্মক্ষমতা বাড়ে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্রেন পাওয়ার বাড়তে সময় লাগে না।
(২) রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে: গোসলের সঙ্গে ডায়াবেটিস রোগের কী সম্পর্ক? গবেষকরা জানান, ডায়াবেটিস রোগীরা যদি টানা ৩ সপ্তাহ, দৈনিক ২০-৩০ মিনিট গরম পানিতে গোসল করেন, তাহলে রক্তে শর্করার মাত্রা প্রায় ১৩ শতাংশ কমে যায়। ফলে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না।
(৩) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: শুধু ঠান্ডা নয়, গরম পানিতে গোসল করলে ভাসকুলার এবং লিম্ফ সিস্টেম থেকে প্রচুর মাত্রায় ইমিউন সেলের জন্ম হতে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে থাকে। আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে, রোগ প্রতিরোধ ব্য়বস্থা যত শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তত রোগভোগের আশঙ্কা হ্রাস পায়। তাহলে প্রতিদিন গোসল করার গুরুত্ব কতটা।
(৪) ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: প্রতিবার ঠান্ডা পানি মাথায় ঢালার সময় কোনও এক অজানা কারণে আমাদের ফুসফুস সংকুচিত হয়ে যায়। এমনটা বার বার হওয়ার কারণে লাং-এ অক্সিজেনের সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, যে হারে আজকাল বায়ুদূষণের প্রকোপ বাড়ছে তাতে ফুসফুসকে অতিরিক্ত চাঙ্গা না রাখলে কিন্তু বিপদ! তাই যতই ল্যাথারজিক লাগুক না কেন, প্রতিদিন সকাল-বিকাল গোসল করা মাস্ট।
(৫) হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: হালকা গরম পানিতে গোসল করলে সারা শরীরে রক্তের সরবরাহ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে হার্টের কর্মক্ষমতা এতটা বেড়ে যায় যে কোনও ধরনের কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। প্রসঙ্গত, নিয়মিত উষ্ণ গরম পানিতে গোসল শুরু করলে রক্তচাপও স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ফলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কমতে সময় লাগে না।
(৬) পেশির কর্মক্ষমতা বাড়ে: সারা দিন ধরে কাজ করতে করতে আমাদের সারা শরীরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা পেশিরা যেমন ক্লান্ত হয়ে পরে, তেমনি তাদের গায়ে বেজায় চোট-আঘাতও লাগে। এমন অবস্থায় দিনের শেষে হলকা গরম পানি অথবা ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে পেশির চোট সারতে শুরু করে। সেই সঙ্গে তারা পুনরায় চাঙ্গা হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত, পেশির সচলতা বৃদ্ধির পিছনে গোসলের যে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন গবেষকরাও।
(৭) রক্ত প্রবাহের উন্নতি ঘটে: গোসল করার সময় ঠান্ডা পানির স্পর্শ লাগার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সারা শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে একদিকে যেমন হার্টের পাশাপাশি দেহের ভাইটাল অর্গানদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, তেমনি অন্যদিকে রক্তচাপও কমতে থাকে। ফলে সার্বিকভাবে শরীর একেবারে তরতাজা হয়ে ওঠে।
(৮) স্ট্রেস লেভেল কমতে থাকে: দিন শেষে ক্লান্তি এবং স্টেস যখন ঘারে চেপে বসে, তখন যেন পা এগতে চায় না। মনে হয় জীবনটা যেন থেমে গেছে কোনও বোল্ডারে বাঁধা পেয়ে। এমন অবস্থায় মহৌষধির কাজ করে এক বালতি ঠান্ডা পানি। সেটা যখন মাথা হয়ে সারা শরীরে ঝাপিয়ে পরে, তখন আমাদের মস্তিষ্কের অন্দরে বিটা-এন্ডোরফিন এবং নোরাএড্রেনালিনের মতো হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়।
ফলে নিমেষে স্ট্রেস এবং ডিপ্রেশন কমে গিয়ে মন চাঙ্গা হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে ক্লান্ত জীবন ফিরে পায় তার হারিয়ে যাওয়া মরুদ্যান!