নজরকাড়া সাফল্যে বদলে যায় অনেক কিছুই। জোটে প্রশংসা। অভিনন্দন। বারবার উপেক্ষিত বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অবস্থাও ঠিক তেমনই। এ অঞ্চলে নারী ক্রিকেটে যাদের একচ্ছত্র প্রাধান্য ও কর্তৃত্ব, সেই ভারতীয় নারীদের হারিয়ে এশিয়া কাপ (টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের) চ্যাম্পিয়ন হবার পর হঠাৎ ‘সাদা-কালো’ থেকে যেন ‘রঙিন আলো’য় সালমার দল। ঐ এক সাফল্যে তারা এখন আলোচিত। আলোড়িত। পাদপ্রদীপের আলোয়। অনাদরের বদলে মিলছে সাদর অভিনন্দন।
বাংলাদেশ নারী দল এখন ভাসছে অভিনন্দন, শুভেচ্ছা, প্রশংসাস্তুতির জোয়ারে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্র ও দেশের নানা পর্যায় থেকে আসছে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
মহাদেশীয় ক্রিকেটে সেরা হবার অনন্য কৃতিত্ব অর্জনের জন্য বিসিবিও নারী দলকে অন্যরকম সংবর্ধনা দেয়ার কথা ভাবছে। আজ সন্ধ্যায় হোটেল সোনারগাঁয় আনুষ্ঠানিকভাবে সালমা বাহিনীকে সংবর্ধিত করা হবে।
সেটাই শেষ নয়। এতকাল উপেক্ষিত সালমা, রুমানা, জাহানারা, আয়েশা, পিংকি, সানজিদা আর খাদিজাদের জন্য অপেক্ষা করছে বড় অংকের আর্থিক পুরস্কারও।
এখন পর্যন্ত অবশ্য কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। বোর্ড সভাপতি, বিসিবি প্রধান নির্বাহী কিংবা কোনো শীর্ষ পরিচালক প্রকাশ্যে অর্থ পুরস্কারের কথা জানাননি। তবে ভিতরের খবর, এশিয়া বিজয়ের অসামান্য কৃতিত্বর জন্য শুধু অভিনন্দনে সিক্ত হওয়াই নয়। অর্থ পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন নারী ক্রিকেটারররা।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর, বিসিবি নারী দলের প্রতি সদস্যকে নগদ অর্থ পুরস্কার প্রদান করবে। অন্তত তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড। আজ সন্ধ্যায়ই আসছে সে ঘোষণা। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সে অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা দেবেন।
কাল রাতেই বোর্ডের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, একটা সম্মানজনক অর্থ পুরস্কারের চিন্তাই চলছে। তবে পরিমাণ নির্ধারিত হয়নি। সেটা বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপন ঠিক করবেন। আজ বিকেলে যে বোর্ড পরিচালক পর্ষদের সভা আছে, সেখানেও তা চূড়ান্ত হতে পারে। তবে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, জনপ্রতি অন্তত তিন লাখ টাকার কম দেয়া হবে না। টাকার অংকটা পাঁচ লাখ টাকা করেও হতে পারে।
ঠিক বৈষম্য না থাকলেও এতকাল পুরুষ ক্রিকেট দলের তুলনায় নারী ক্রিকেট দল ছিল উপেক্ষিত। সুবিধা বঞ্চিতও বলা যায়। মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহদের তুলনায় আনুপাতিকহারে সালমা, রুমানা, জাহানারা, পিংকি আর খাদিজাদের মাসিক বেতন ছিল খুব কম। সেই সাথে আনুষাঙ্গিক সুযোগ-সুবিধাও ছিল নেহায়েত নগন্য। নামমাত্র ম্যাচ ফি দেয়া হয়।
নারী ক্রিকেটারদের বেতন ভাতা ও আনুষাঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে রাজ্যের সমালোচনা হয়েছে। মিডিয়ায় প্রচুর লেখালেখি চলেছে। প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং দিনকে দিন পুরুষ ক্রিকেটারদের সাথে নারী ক্রিকেটারদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা আনুপাতিক হারে কমেছে।
এবার এশিয়া কাপে নারী ক্রিকেটারদের অবিস্মরনীয় নৈপুণ্য এবং ভারতীয় নারী দলকে হারানোয় টনক নড়েছে বোর্ডের। ভিতরের খবর- সালমা, রুমানা, জাহানারা এবং আয়েশা, সানজিদা, পিংকি ও খাদিজাদের মাসিক বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথাও জোরেসোরে ভাবা হচ্ছে।
কাজেই ধরেই নেয়া যায়, এক সাফল্যেই বরাবরের সুবিধা বঞ্চিত নারী ক্রিকেটারদের ভাগ্য বদলাচ্ছে। মাশরাফি, সাকিব ও মুশফিক-তামিমদের মত লাখ লাখ টাকা না হলেও আগামীতে সালমা, রুমানা ও জাহানারাদের আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়বে বলেই আশা করা হচ্ছে।