আজ লিখবো শেরপুরের একজন সুপার সাহসী ছেলের কথা। হুম সুপার সাহসী ছেলেদের নিয়ে আমরা আলোচনা করতে অভ্যস্ত নয়। কারন আমাদের কাছে সাহসী ছেলে মানেই লাল শার্ট আর ভাঙ্গা রেললাইন।
অথচ সমাজ ও পরিবারের এমন হাজারো ভাঙ্গা লাইনকে লাল কার্ড দেখানো ছেলে মেয়ে গুলো আমাদের পাশেই থাকে। ঠিক এমনই একজন তুষার আল নূর।
আমার সাথে বন্ধুত্ব ছোট সময় থেকেই। কিন্তু কখনো তাকে আবিষ্কার করতে পারিনি।
যাই হোক ফেসবুকের কল্যাণে তাকে নতুন করে চিনতে শুরু করি। রক্তদানসহ সামাজিক কাজকর্মের প্রতি আগ্রহ বেশ জোরালো। আগ্রহ থেকেই সাহসের জন্ম হয়।
কাটাখালি ব্রিজ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধারণ করে রেখেছে। শহীদ নাজমুলের স্মৃতি শেরপুরবাসীর জন্য অহংকার ও গর্বের বিষয়। হঠাৎ একদিন কিছু মানুষের মাথা ব্যাথার কারন হলো এই কাটাখালি ব্রিজ।
তারা ভেঙ্গে ফেলতে চাইলো ব্রিজটি। কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি যে কাটাখালির সাথে মিশে আছে শেরপুরের মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদ নাজমুলসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা।
বছর দুয়েক আগে খুব সম্ভবত ২০১৬ সালের আগস্টের দিকে ব্রিজটি ভেঙ্গে ফেলার কার্যক্রম শুরু। কিছু অংশ ভেঙ্গেও ফেলে। ব্যাপারটি নিয়ে অবশ্য কারো কোন মাথা ব্যাথাও ছিল না। থাকার কথাও না। অনেকেই জানেনা আবার অনেকেই সাহস করেনা স্রোতের বিপরীতে গিয়ে দাঁড়াতে।
ঠিক সেই মুহূর্তে এই ছেলেটি স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে যায়। আগের দিন তার বাবাকে হাঁরিয়েছে। তাতেও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। মাথার মধ্যে যেন একটাই ধ্বনি বাজতে শুরু করেছে “মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদ নাজমুলের স্মৃতি রক্ষা করতেই হবে যে কোন মূল্যে!”
বাঁধা দিতে গিয়ে পুলিশি ঝামেলা পর্যন্ত তাকে পোহাতে হয়েছে। পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে নিয়ে যাওয়ার হুমকি তো সবসময় পেতে হয়েছে।
তারপরও সে থেমে যায়নি। একটা সময় এসে কাটাখালি ব্রিজ রক্ষার দাবিটি আর শুধু তুষার আল নূর এর মধ্যে আটকে থাকেনা। দিনে দিনে গণ দাবিতে পরিনত হয়।
আজ সেখানে স্মৃতি ফলক হয়েছে। সেখানে প্রতিদিন শত শত মানুষ আসে।
দুই দিন আগে তুষারের সাথে কথা হলো। সেখানে শহীদ নাজমুল স্মৃতি টেকনিক্যাল কলেজ করার চিন্তা আছে।
বন্ধু তুই যখন চিন্তা করতেছিস আমার বিশ্বাস কলেজ হবে। হয়তো একটু দৌড়ঝাপ পারতে হবে। কিন্তু কলেজ হবে।
আসুন না তুষারদের একটু সাধুবাদ জানাই। তাদের সাথে কাজ না করতে পারি একটু উৎসাহ দিই। এরাই তো বাংলাদেশ।
এরকম হাজারো তুষার আপনার আমার আশে পাশে রয়েছে। তাদের তুলে ধরুন। তাদের কাজ কে সম্মান জানান দেখবেন সমাজে ভাল কাজ করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাবে।
লেখা: মুরাদ খান (তরুণ কবি ও লেখক)