ঈদ ছাড়া এমন লম্বা ছুটি সহজে মেলে না। সরকারি ছুটি তো আছেই, এর সঙ্গে বাড়তি দু-এক দিন যোগ করে টেনে দীর্ঘ করা হয়েছে। ছুটি গিয়ে ঠেকেছে নয় দিনে। সে অনুযায়ী ঘুরে বেড়ানোর ছকও করা সারা। এর মধ্যে ছুটিবিলাসী অনেকে বেছে নিয়েছেন সাগরপারের শহর কক্সবাজার।
কাল বৃহস্পতিবার থেকে লাখো পর্যটকের ভিড় সামাল দিতে প্রস্তুত কক্সবাজারের হোটেল, মোটেলসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে শহরের চার শতাধিক হোটেল, মোটেল কটেজ ও গেস্টহাউসের সব কক্ষ আগাম ভাড়া হয়ে গেছে। হোটেল মালিক, পর্যটন ব্যবসা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
হোটেল মালিক ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে ব্যক্তিগতভাবে অনেকে ছুটি লম্বা করে নিয়েছেন। তা ঠেকেছে গিয়ে নয় দিনে।
চাকরিজীবী অনেকে কাল বৃহস্পতিবার অফিস শেষে বিকেলে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেবেন। পরের দুদিন ২৭ ও ২৮ এপ্রিল শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ২৯ এপ্রিল বুদ্ধপূর্ণিমার সরকারি ছুটি। ৩০ এপ্রিল যদিও ছুটি নেই, কিন্তু অনেকে দিনটাকে ছুটির সঙ্গেই মিলিয়ে দিয়েছেন। কারণ, পরের দুদিন আবার টানা ছুটি। ১ মে মহান মে দিবসের সরকারি ছুটি। পরদিন ২ মে শবে বরাতের ছুটি। পরদিন বৃহস্পতিবার অনেকেই ছুটি নিয়ে নিয়েছেন। কারণ, এর পরের দুদিন শুক্র ও শনিবার তো সাপ্তাহিক ছুটি রয়েছেই।
পর্যটকদের সেবায় নিয়োজিত কক্সবাজারের শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংগঠন ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি তোফায়েল আহমেদ দাবি করেন, এই ছুটিতে অন্তত ছয় লাখ পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণে আসবেন। এতে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে শহরের চার শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউসের সব কক্ষ আগাম ভাড়া হয়ে গেছে। আরও শতাধিক হোটেলের কক্ষও দু-এক দিনের মধ্যে বুকিং হয়ে যাবে। পর্যটকেরা কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণের পাশাপাশি প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন, টেকনাফের মাথিন কূপ, নাফ নদীর জালিয়ার দ্বীপ, মিয়ানমার সীমান্ত, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রামুর বৌদ্ধপল্লি, ডুলাহাজারার সাফারি পার্ক ভ্রমণে যাবেন।
কক্সবাজার কটেজ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কাজী রাসেল আহমেদ বলেন, আশা করা যাচ্ছে, এই ছুটিতে ছয় লাখ পর্যটক আসছেন কক্সবাজারে। এই বিপুলসংখ্যক পর্যটক সামাল দিতে নানা প্রস্তুতি নিয়ে নেওয়া হয়েছে। শহরের চার শতাধিক হোটেল, মোটেল গেস্ট হাউস, কটেজে এক দিনে এক লাখের মতো পর্যটকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। দিনে এর বেশি পর্যটক এলে হোটেলে গাদাগাদি করে রাখতে হয়। তবে এ সময় নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও বাড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি। বলেন, পর্যটকের নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশ কাজ করছে। তবে এই সময়ে পর্যটকের চাপ সামলাতে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো দরকার।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমি বলেন, লাখো পর্যটক নিরাপদে এবং নির্বিঘ্নে যেন সৈকতে ঘুরতে পারেন, সে লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ জন্য শতাধিক টুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে আরও অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নসহ (র্যাব) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।
কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার জানান, সৈকতের ডায়াবেটিকস পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত চার কিলোমিটারে টুরিস্ট পুলিশ রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা এবং মেরিন ড্রাইভসহ ইনানী সৈকতে সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। তা ছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের সময় পর্যটকদের সঙ্গে থাকছে একদল টুরিস্ট পুলিশ।
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, পর্যটক হয়রানি রোধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নেমেছেন। হোটেল কক্ষ ভাড়া ও খাবারের দাম অতিরিক্ত নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেবেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।