এশিয়া কাপের ফাইনালে ৬ বারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশের মেয়েরা। আর এই জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলো শেরপুর এর মেয়ে নিগার সুলতানা জ্যোতি। ২৪ বলে তার ২৭ রানের (দলীয় সর্বোচ্চ) অনবদ্য ইনিংসের উপর ভর করেই কুয়ালালামপুরের কিনরারা একাডেমি ওভাল স্টেডিয়ামে স্বগৌরবে উড়ল বাংলাদেশের পতাকা।
টাইগ্রেসদের এ জয় যেন এক ঐতিহাসিক মঞ্চ রচনা। এশিয়া কাপের ছয় আসরের সবকটিতেই চ্যাম্পিয়ন শিরোপা ঘরে তুলেছে ভারত।
এবারই প্রথমবার ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। সে হিসেবে ফাইনালে একেবারেই অনভিজ্ঞ একটি দল বাংলাদেশ শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলল।
ভারতের ছুড়ে দেয়া ১১৩ রানের চ্যালেঞ্জ তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশকে দারুণ সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার শামীমা সুলতানা এবং আয়েশা রহমান। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভার থেকে বিনা উইকেটে ৩৩ রান করে বাংলাদেশ। ইনিংসের সপ্তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন ভারতীয়দের সেরা বোলার পুনম।
ওভারের শেষ দুই বলে দুই ওপেনারকেই সাজঘরে পাঠিয়ে দেন পুনম। দুই ওপেনার শামীমা ১৬ এবং আয়েশা করেন ১৭ রান। তৃতীয় উইকেটে ২০ রানের জুটি গড়ে প্রতিরোধ গড়েন নিগার সুলতানা জ্যোতি এবং ফারজানা হক পিংকি। এই জুটিও ভাঙেন লেগস্পিনার পুনম। ১১ রান করে ফেরেন ফারজানা।
চতুর্থ উইকেটে বাংলাদেশ ইনিংস এগিয়ে নেন রোমানা আহমেদ এবং শেরপুর এর রাজবল্লভপুর এর মেয়ে নিগার সুলতানা জ্যোতি। মাত্র ২২ বলে ৩০ রান যোগ করে এই জুটি। নিজের শেষ ওভার করতে এসে আবারো জুটি ভাঙেন পুনম। কোমরের অনেক উপরের ফুলটস বল উইকেট ছেড়ে ছক্কা মারতে গিয়ে মিড উইকেটে ধরা পড়েন জ্যোতি।
উইকেট ছেড়ে অনেক এগিয়ে আসায় নো বল থেকে বেঁচে যান পুনম। আউট হওয়ার আগে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৭ রান করেন জ্যোতি। তার বিদায়ে উইকেটে এসেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন ফাহিমা খাতুন। স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ধরা পড়ার আগে ১ চারের মারে ৭ বলে ৯ রান করেন ফাহিমা। অপর প্রান্তে বাংলাদেশের আশা বাঁচিয়ে রাখেন রোমানা।
শেষের ৩ ওভারে বাংলাদেশের জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৩ রান। ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রিতের করা ওভার থেকে ১০ রান নিয়ে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু ১৯ তম ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়ে ভারতকে ম্যাচে ফেরান দীপ্তি শর্মা। শেষ ওভারে বাকি জয়ের জন্য বাকি থাকে ৯ রান। ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রিত কাউরের কাছ থেকে এই ৯ রান নিয়ে বিজয়ের উল্লাসে মেতে ওঠে বাংলাদেশ।
এক নজরে নিগার সুলতানা জ্যোতি:
(জন্ম: ১ আগস্ট, ১৯৯৭) শেরপুর জেলায় জন্মগ্রহণকারী বাংলাদেশের প্রথিতযশা প্রমিলা ক্রিকেটার। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য তিনি। দলে তিনি মূলতঃ উইকেট-কিপারের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। পাশাপাশি ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবেও নিগার সুলতানা দলে ভূমিকা রাখছেন।
৬ অক্টোবর, ২০১৫ তারিখে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে তার ওডিআই অভিষেক ঘটে। করাচীতে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় তিনি ১০৯ বল মোকাবেলা করে দু’টি বাউন্ডারি সহযোগে অপরাজিত ৩০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এর পূর্বে ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ তারিখে একই দলের বিপক্ষে করাচীতে অনুষ্ঠিত টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকে অভিষিক্ত হন তিনি ।
১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ তারিখে আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কর্তৃক ঘোষিত মহিলা দলে তিনিও অন্যতম সদস্য মনোনীত হন। ১৫ মার্চ, ২০১৬ তারিখে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী খেলায় ভারতের বিপক্ষে অপরাজিত ২৭* রান করলেও তার দল ৭২ রানে পরাজিত হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের(আইসিসি) চোখে সেরা পাঁচ উদীয়মান তারকার মধ্যেও জায়গা হয়েছে এক বাংলাদেশির।
টি-টোয়েন্টি কোয়ালিফায়ার শেষে উদীয়মান পাঁচ তারকার মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশ নারী দলের উইকেটরক্ষক নিগার সুলতানা জ্যোতি। আইসিসির ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে, ‘মাঠের প্রথম ব্যক্তি যিনি প্রতিপক্ষ দলের জুটি ভাঙতে নিজের দলকে কণ্ঠ দিয়েই মাতিয়ে করে রাখেন। বাংলাদেশ দলের ১৮ বয়সী উইকেটরক্ষক নিগার সুলতানা জ্যোতি বরাবরই আক্রমণের মূলে থাকেন।’
উত্তরা ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের ৪৫ তম ব্যাচের ছাত্রী নিগার সম্পর্কে আইসিসি আরো লিখেছে, ‘একজন উইকেটরক্ষকের ঠিক এরকমই হতে হয়।’
শেরপুর শহরের রাজবল্লভপুর এলাকার সিরাজুল হক ও সালমা হক দম্পতির মেয়ে জ্যোতি, এ পর্যন্ত পাওয়া সাফল্যের জন্য তিনি কৃতজ্ঞ কোচ মোখলেসুর রহমানের প্রতি। মা-বাবা আর ভাইয়ের উৎসাহও তাঁর এগিয়ে চলার বড় প্রেরণা। দেশবাসীর দোয়া পুঁজি করে জ্যোতি দ্যুতি ছড়িয়ে যেতে চান, আরও সম্মান বয়ে আনতে চান দেশের জন্য।