দিনাজপুর শহরের একটি ঐতিহ্য হল রামসাগর। নামে সাগর হলেও আসলে এটি একটি বিশাল দিঘি। তবে এর বিশালতা দেখে এটাকে সাগর বলে ভুল হওয়াও বিচিত্র কিছু না। এক সময় খাবার পানির অভাব পূরণ করার জন্য খনন করা হয়েছিল এটা যা বর্তমানে দিনাজপুর-বাসীর চিত্তবিনোদন এর স্থান হিসেবেই বেশি পরিচিত।
কোথায়: দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে তেজপুর গ্রামে এই দিঘিটি অবস্থিত।
কীভাবে: সড়ক ও রেলপথে ঢাকা থেকে দিনাজপুর যাওয়া যায়। এ পথের বাসগুলো সাধারণত ছাড়ে ঢাকার গাবতলি ও কল্যাণপুর থেকে। নাবিল পরিবহনের এসি বাসের ভাড়া ১ হাজার টাকা। এছাড়া নাবিল পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এস আর ট্রাভেলস, কেয়া পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন ইত্যাদি নন এসি বাসের ভাড়া ৫ শত থেকে ৬ শত টাকা।
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে আন্তঃনগর দ্রুত-যান এক্সপ্রেস সপ্তাহের বুধবার ছাড়া প্রতিদিন ছাড়ে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে। আন্তঃনগর একতা এক্সপ্রেস মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন ছাড়ে সকাল ১০টায়। ভাড়া শোভন সিট ৩৩৫ টাকা, শোভন চেয়ার ৪৩০, প্রথম শ্রেণী চেয়ার ৫৭০, প্রথম শ্রেণী বার্থ ৮৫৫, এসি চেয়ার ৭১৫, এসি বার্থ ১,২৮৫ টাকা।
দিনাজপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে দ্রুত-যান এক্সপ্রেস বুধবার ছাড়া প্রতিদিন ছাড়ে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে। আর একতা এক্সপ্রেস সোমবার ছাড়া প্রতিদিন ছাড়ে রাত ৯টা ২০ মিনিটে।
বিশাল এলাকা নিয়ে একটা প্রাকৃতিক পরিবেশ এই রামসাগর। ছবি: রাকিব মাহবুব।
ইতিহাস ও লোককথা: এই দিঘির ইতিহাস অনুসারে এই দীঘিটি রাজা প্রাণনাথ খনন করেছিলেন এবং এই দীঘিটি খনন করতে প্রায় দেড় লক্ষ শ্রমিক কাজ করেছিল। বস্তুনিষ্ঠ তথ্য হিসেবে এটুকুই পাওয়া যায়, তবে এর বাইরে লোককথা থেকে যাওয়া যায় আরও অনেক কিছুই। স্থানীয় লোককথা বলে, ১৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে প্রচণ্ড খরা দেখা দিলে এই এলাকার প্রচুর মানুষ মারা যায়। রাজা প্রাণনাথ তখন একটি পুকুর খনন করেন স্বপ্নাদেশ পেয়ে। কিন্তু কাজ শেষ হবার পরেও সেই পুকুরে পানি ওঠে না। রাজা তখন আবার স্বপ্নে দেখতে পান যে, যদি তাঁর ছেলেকে ঐ খনন করা দীঘিতে বলি দেন তাহলে এই দীঘিতে পানি উঠবে। প্রজাদের জীবনের কথা ভেবে অতঃপর রাজা তাঁর ছেলে রামনাথকে দীঘিতে নামিয়ে দেওয়ার পর দীঘিতে পানি উঠতে থাকে এবং রামনাথ সেই দীঘিতে তলিয়ে যায়। তাই রামনাথ এর নামানুসারে এই দীঘির নামকরণ করা হয় রামসাগর।
রাম সাগর এর চারদিকে রয়েছে সবুজ প্রান্তর। ধূসর ছোট ছোট মাটির টিলার পাড় দ্বারা বেষ্টিত গ্রামীণ প্রকৃতির মধ্যে এক খণ্ড লাল গৈরিক ও স্ফীতিময় খিয়ার মাটির উপর এই দীঘির চারপাশে নানা প্রজাতির গাছ। আর সাথে রয়েছে নাম না জানা পাখির কলরব। আরও রয়েছে গোটা বিশেক হরিণের আস্তানা। অপরূপ মনোমুগ্ধকর পরিবেশে এই সাগর-রূপ দিঘী অবস্থিত।
চারপাশ সবুজ গাছপালায় ঘেরা রামসাগরকে দূর থেকে অরণ্য ভেবে ভুল করতে পারেন অনেকে। ইট বিছানো উঁচু রাস্তাটিতে উঠে বাঁ দিকে চোখ ফেরাতেই বিস্তীর্ণ জলরাশি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। চারপাশে রয়েছে প্রচুর গাছ, আর সেগুলোর নিচে বসে বেশ সময় কাটিয়ে দেয়া যায়।
রামসাগর শখের মৎস্য শিকারিদের কাছেও অত্যন্ত জনপ্রিয়। ১০০০ টাকা টিকিটের বিনিময়ে এখানে সারাদিন মাছ ধরা যায়। এছাড়াও অনুমতি নিয়ে দলবদ্ধ ভাবে পিকনিকও করা যায় এই স্থানে।
দিনাজপুর শহরে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল হচ্ছে পর্যটন মোটেল (০৫৩১-৬৪৭১৮)। এসি রুমের ভাড়া ১৭শত থেকে ২২শত টাকার মধ্যে। এছাড়া দিনাজপুরের অন্যান্য সাধারণ মানের হোটেলে ২৫০ থেকে থেকে ১২০০ টাকায় রাত কাটানোর ব্যবস্থা আছে। উল্লেখ যে, যেসব ভাড়ার পরিমাণ উল্লেখিত হয়েছে, সেগুলো বর্তমান অনুসন্ধানের ফল। সময়ের সাথে সাথে এর পরিবর্তন হতে পারে।