নতুন ঋণ আবেদনকারীদের দলিলাদি সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই এবং সত্যতা যাচাই করে ঋণ বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একই সঙ্গে যে সব গ্রাহকের ঋণ অপলোপন করা হয়েছে তাদের সঙ্গে ভবিষ্যতে নতুন করে কোন ব্যবসা করা যাবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীর সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘নতুন করে আর কোনো ঋণ অবলোপন করা যাবে না। একবার যে গ্রাহকের ঋণ অবলোপন করা হয় তার সঙ্গে আর ব্যাংকের ব্যবসা করা সমীচীন নয়। এ ছাড়া ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ঋণ গ্রহীতার ব্যক্তিগত জামানত বা গ্যারান্টি রাখারও পরামর্শ দেন অর্থমন্ত্রী।
রাষ্ট্রায়ত্ব চার ব্যাংক,সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, খেলাপিঋণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য নিয়োগ দিতে হবে ভালো ল’ফার্ম। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী জানতে চান, যাদের ঋণ অবলোপন করা হয়েছে তা সঠিক পদ্ধতিতে করা হচ্ছে কি না? ঋণ অবলোপনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতেও তিনি ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন হবে।
ঋণ খেলাপি হওয়ার পেছনে ব্যাংকের অদক্ষ ব্যবস্থাপনা অনেকাংশে দায়ী উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ ক্ষেত্রে গ্রাহককে একতরফা দায়ী করা যাবে না, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত জামানত গ্রাহক বন্ধক দিচ্ছে কি না তা বিবেচনা করা প্রয়োজন। কোনো ব্যাংকেরই উপযুক্ত জামানত ছাড়া ঋণ দেওয়া উচিত নয়। কারণ, শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ঋণ খেলাপি হয়েছে ভুয়া দলিল দাখিল করে ঋণ নেওয়ার সুযোগ নেওয়ায়।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল বলেন, ঋণ খেলাপি না হওয়ার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রয়োজনীয় বিধিবিধান জারি করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক ওই বিধিবিধানগুলো সঠিকভাবে পরিপালন না করায় ঋণ খেলাপি বাড়ছে। এছাড়াও ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোতে ঝুঁকি নির্ণয় পদ্ধতি, নীতিমালা, কার্যক্রম সব থাকলেও বেশির ভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংক সেগুলো পরিপালন করছে না। ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে অতি মূল্যায়নের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে কি না সেগুলো যথাযথভাবে যাচাই করার জন্য ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেন অর্থমন্ত্রী।
বৈঠকে অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে ৯ দফা নির্দেশনা দেওয় হয়। এই সব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, সব ব্যাংককে শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ কমাতে হবে। নতুন করে আর কোনো ঋণ যাতে শ্রেণীকৃত না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক বিবরণী অভিন্ন ভাবে প্রস্তুত করতে হবে। বিশেষ করে ব্যালেন্স শিটে আর্নি অ্যাসেট, নন-আর্নি অ্যাসেট, গভর্মেন্ট লাইবেলিটি, নন-গভর্মেন্ট লাইবেলিটি ইত্যাদি বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। ব্যাংকগুলোর পরিচালনাগত মুনাফা বৃদ্ধি করতে হবে। অটোমেশনের প্রতি গুরুত্বারোপসহ কাগজবিহীন লেনদেন চালু করতে হবে, যাতে সহজে ও দ্রুত গতিতে আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করা যায়। ব্যাংকগুলোতে প্রণোদনা ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং ভালো গ্রাহককে উপযুক্তভাবে পুরস্কৃত করতে হবে। একইভাবে শাস্তির বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাহক কিংবা ব্যাংক কর্মকর্তা যেই অপকর্ম করুক তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী নতুন করে আর কোনো ঋণ অবলোপন না করার উপর জোর দেন। এছাড়া ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব নিয়েও বিষদ আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র জানায়।