ফিলিস্তিনের গাজায় বেসামরিক মানুষের আরও প্রাণহানির আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন ইতিমধ্যে ইসরায়েলে ভারী অস্ত্রের চালান স্থগিত করেছে। এর মধ্যে বাংকারবিধ্বংসী বোমাও ছিল।
কয়েক মাস ধরে এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেই গাজা উপত্যকায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে প্রাণ গেছে নারী-শিশুসহ প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের।
৮ মে মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনকে একটি সাক্ষাৎকার দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাতে বাইডেন হুমকি দিয়ে বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী গাজার রাফায় পূর্ণমাত্রায় অভিযানের নির্দেশ দিলে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে তার অস্ত্রের চালান বন্ধ করে দিতে পারে।
সাত মাস ধরে ইসরায়েলের টানা যুদ্ধে গাজার লাখো উদ্বাস্তু এখন রাফায় আশ্রয় নিয়েছেন। এখন সেখানে ইসরায়েলি বাহিনী পূর্ণমাত্রায় অভিযান চালালে বহু বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি হবে। এমন আশঙ্কা থেকেই বহুদিনের মিত্র ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাইডেন।
কানাডা ও নেদারল্যান্ডস চলতি বছর ইসরায়েলে অস্ত্রের চালান পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। দেশ দুটির আশঙ্কা, বৈশ্বিক মানবিক আইন উপেক্ষা করে গাজায় বেসামরিক মানুষের ওপর তাদের পাঠানো অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে ইসরায়েলি বাহিনী।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল। দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে অস্ত্র সরবরাহের সবচেয়ে বড় ও নির্ভরযোগ্য উৎস ওয়াশিংটন। ইসরায়েলকে অস্ত্রদাতাদের তালিকায় রয়েছে ইউরোপের জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্য।
তবে কানাডা ও নেদারল্যান্ডস চলতি বছর ইসরায়েলে অস্ত্রের চালান পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। দেশ দুটির আশঙ্কা, বৈশ্বিক মানবিক আইন উপেক্ষা করে গাজায় বেসামরিক মানুষের ওপর তাদের পাঠানো অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে ইসরায়েলি বাহিনী।
আন্তর্জাতিক অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর স্থল ও বিমান হামলায় নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বেসামরিক মানুষ। তবে ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, তারা বেসামরিক মানুষের ওপর আক্রমণ চালায়নি। গাজায় হামাসের যোদ্ধারা বেসামরিক মানুষের মধ্যে মিশে গেছে। যদিও হামাস এ দাবি অস্বীকার করেছে।
দেখে নেওয়া যাক, কোন দেশ ইসরায়েলকে কেমন ও কত অস্ত্র সরবরাহ করেছে, করছে:
মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, ইসরায়েলে স্থগিত করা অস্ত্রের চালানে ১,৮০০ ২,০০০ পাউন্ড বোমা ও ১,৭০০ ৫০০ পাউন্ড বোমা ছিল। এসব বোমার মূল্য লাখ লাখ ডলার। এক কর্মকর্তা বলেন, ২০০০ পাউন্ডের বোমার ব্যবহার জনবহুল রাফায় মারাত্মক প্রভাব তৈরি করতে পারে। এ আশঙ্কা থেকে অস্ত্রের চালান স্থগিত করা হয়েছে।
যাহোক, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোটি কোটি ডলারের অস্ত্রশস্ত্র ইসরায়েলে সরবরাহের অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে ট্যাংকের গোলাসহ অন্যান্য গোলাবারুদ রয়েছে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির শীর্ষ রিপাবলিকান সদস্য জিম রিশচ ৯ মে বলেন, ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহের প্রস্তাব অনুমোদনের প্রক্রিয়া অনেকটাই শ্লথ হয়ে পড়েছে।
একই দিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওসের খবরে বলা হয়, গাজায় ইসরায়েলের আচরণ নিয়ে অতি সমালোচনামূলক একটি প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ মার্কিন কংগ্রেসে উপস্থাপন ঠেকিয়ে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। প্রতিবেদনে বলা ছিল, মার্কিন অস্ত্র সরবরাহের সময় এর ব্যবহার নিয়ে যেসব শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছিল, গাজায় তা চরমভাবে লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইসরায়েল যে পরিমাণ সামরিক সহায়তা পেয়েছে, তার ৬৯ শতাংশ সরবরাহ করেছে ওয়াশিংটন। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) এ তথ্য জানিয়েছে।
ইনস্টিটিউট বলছে, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল তৃতীয়বারের মতো ১০ বছর মেয়াদের একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। এতে ২০১৮ থেকে পরের ১০ বছরে ইসরায়েলকে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা, ৩৩ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম ও ৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দেওয়ার অঙ্গীকার করে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে থাকে ইসরায়েল। প্রথম আন্তর্জাতিক মিত্র হিসেবে একমাত্র ইসরায়েল এ যুদ্ধবিমান ব্যবহারের সুযোগ পায়। বিশ্বের অন্যতম সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান এটি। এ ছাড়া সহায়তার অর্থে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৭৫টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনছে ইসরায়েল। ইতিমধ্যে ৩৬টি সরবরাহ করা হয়েছে।
ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আয়রন ডোমের আধুনিকায়নেও সহায়তা করছে ওয়াশিংটন। ২০০৬ সালে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধের পর এটার আধুনিকায়ন শুরু করে ইসরায়েল।