শেরপুর-ঝিনাইগাতীতে ঐতিহাসিক কাটাখালি ব্রীজে “অপারেশন কাটাখালি ও যুদ্ধ দিবস” উপলক্ষে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে বৃক্ষরোপণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অবশেষে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী শেরপুর-ঝিনাইগাতী সড়কের কাটাখালি ব্রীজে ‘অপারেশন কাটাখালি’ ও রাঙ্গামাটিয়া যুদ্ধের শহীদদের নাম ও ঘটনার বর্ণনা সম্বলিত স্মৃতিফলক হচ্ছে। ৬ জুলাই বৃহস্পতিবার কাঁটাখালি দিবসে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে রজনীগন্ধায় অনুষ্ঠিত অগ্রাধিকার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সভায় ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়র হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ওই কমিটির কর্ণধার (মেন্টর) শেরপুরের সন্তান খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আব্দুস সামাদ। সভায় উপস্থিত শেরপুর প্রেসকাবের সভাপতি এ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার, কাটাখালি অপারেশন ও রাঙ্গামাটিয়া যুদ্ধদিবসের কথা স্মরণ করে কাটাখালির পুরনো সেতুটি সংরক্ষণ ও সেখানে স্মৃতিফলক নির্মাণের প্রস্তাব করেন। তাৎণিক ভাবে সভায় কাটাখালি ও রাঙ্গামাটিয়া যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন ও আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া করা হয়। পরে কাটাখালি ব্রীজ এলাকায় যুদ্ধের শহীদদের নাম ও ঘটনার বর্ণনা সম্বলিত স্মৃতিফলক নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন জানান, আগামী এক মাসের মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সহায়তায় জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে কাটাখালি ব্রীজ এলাকায় যুদ্ধে শহীদদের নাম ও ঘটনার বর্ণনা সম্বলিত স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হবে। সভায় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন চন্দ্র পাল, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এটিএম জিয়াউল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামসুল আলম সরকার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ হেলালুজ্জামান সরকারসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালের ৫ জুলাই রাতে কাটাখালি ব্রীজ অপারেশন শেষে ৬ জুলাই ঝিনাইগাতীর রাঙ্গামাটিয়া গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক হানাদার বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে কোম্পানী কমান্ডার নাজমূল আহসান ও তার পরিবারের দুই সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন ও মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন সহ ১২ জন শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ‘অপারেশন কাটাখালি’ ও রাঙ্গামাটিয়া যুদ্ধ এক অন্যান্য স্থান দখল করে আছে। এ বছর কাটাখালি অপারেশনের নায়ক শহীদ নাজমুল আহসানকে মুক্তিযুদ্ধে অনন্য সাহসিকতার জন্য সরকার মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক প্রদান করেছে।
এদিকে, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও চেতনা ভাস্বর করে রাখার জন্য ঝিনাইগাতীর কাটাখালি ব্রীজে স্মৃতিফলক নির্মাণের সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমরা ১৮ বছর বয়স’। বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘অপারেশন কাটাখালি ও রাঙ্গামাটিয়া যুদ্ধ দিবস’ উপলে ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে কাটাখালি ব্রীজ চত্বরে আয়োজিত আলোচনা সভায় সন্তোষ প্রকাশ করে বক্তারা পুরনো সেতুটির পাশে নির্মিত নতুন সেতুটির নাম ‘শহীদ নাজমুল সেতু’ এবং পুরোনো সেতুটি সংরক্ষণ করারও দাবি জানান। ওইসময় কাটাখালি ব্রীজ পরিদর্শনে গিয়ে তাদের দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করেন খুলনা বিভাগের কমিশনার মোঃ আব্দুস সামাদ। অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার নুরুল ইসলাম হীরু, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার, জেলা কৃষক লীগের আহবায়ক আব্দুল কাদির, জনউদ্যোগের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, জেলা পরিষদ সদস্য নজরুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক এম এ হাকাম হীরা ও আমরা আঠার বছর বয়স’র জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম রাঙা শাহীন, ঝিনাইগাতী উপজেলার আ’লীগ নেতা বেলায়েত হোসেন, নমছের আলম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য মাহমুদুল হাসান রুবেল, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার খাঁন শাওন প্রমূখ। আয়োজক সংগঠনের ঝিনাইগাতী উপজেলা সভাপতি তুষার আল নুরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ এলাকার বিপুল সংখ্যক উদ্যেমী যুবক অংশ নেয়। পরে কাটাখালি ভাঙা ব্রীজের দু’ধারে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরোপন করা হয়।
মুহাম্মদ আবু হেলাল, ঝিনাইগাতী।