দুই বছরে ধলেশ্বরী সেতুর টোলের ১৭০ কোটি টাকা রাজস্ববঞ্চিত সরকার তদন্ত প্রতিবেদন চেয়েছে সংসদীয় কমিটি তদন্ত হবে, বলেছেন ওবায়দুল কাদের
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে অবস্থিত ধলেশ্বরী সেতুতে প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ টাকা টোল আদায় হলেও সরকারের কোষাগারে যায় মাত্র ৩ লাখ টাকা। এই হিসাবে ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৭০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার। এরকম অভিযোগ নিয়ে বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত প্রতিবেদন সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
কমিটির সভাপতি একাব্বর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভার্চুয়ালি অংশ নেন। বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সদস্য প্রকৌশলী এনামুল হক ইত্তেফাককে জানান, কমিটির সুপারিশে ধলেশ্বরী সেতুর টোলে অনিয়মের বিষয়টি তদন্তে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। মন্ত্রীও বলেছেন, তদন্ত করা হবে।
সংসদীয় কমিটি সূত্রে প্রাপ্ত কাগজপত্রে দেখা যায়, ধলেশ্বরী সেতুর টোলে অনিয়মের বিষয়ে কমিটির সভাপতি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ আসে। এতে উল্লেখ করা হয়, টোল আদায়ে নিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিধিবহির্ভূতভাবে দুবার চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ঢাকা জোনের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে এটা হয়েছে বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গতকাল সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র উপস্থাপন করা হয়। ইত্তেফাকের কাছে আসা সেই সব কাগজপত্রে দেখা যায়, মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের টোল অধিশাখার এসংক্রান্ত সেবাকাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদনের নথিতে লেখা হয়েছে—প্রচলিত আইন, বিধিবিধান ও নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়েছে। সেজন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সুপারিশ অনুযায়ী ধলেশ্বরী সেতুর টোল ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন অনুমোদিত হয়েছে।
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকালের বৈঠকে হাওর অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন সড়কটি উদ্বোধন করায় প্রধানমন্ত্রীকে কমিটির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানানো হয়। এটা পর্যটন এলাকায় পরিণত হওয়ায় রাস্তাটির আশপাশে তেমন কোনো বাড়িঘর না থাকায় যে কোনো সময় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করা হয়। রাস্তাটিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করে কমিটি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ঢাকা জোনের আওতায় চলমান ২৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। প্রকল্পগুলোর গুণগত মান ঠিক রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে কমিটি।
বৈঠকে জানানো হয়, বৈশ্বিক মহামারির কারণে মেট্রোরেলের কাজ আবার পুরোদমে শুরু হয়েছে। পদ্মায় প্রবল স্রোত থাকায় দীর্ঘ সময় পর ৩২ নম্বর স্প্যান বসানো হয়েছে এবং বাকিগুলোও দ্রুততম সময়ে বসানো হবে বলে বৈঠকে জানায় মন্ত্রণালয়। এছাড়া মহাসড়কগুলোতে অপ্রয়োজনীয় স্পিডব্রেকার অপসারণের জোন ও মহাসড়কভিত্তিক তথ্য বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। কমিটির সদস্য এনামুল হক, হাসিবুর রহমান স্বপন, আবু জাহির, রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক, শেখ সালাহউদ্দিন, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও রাবেয়া আলীম বৈঠকে অংশ নেন।