মে মাসে ৫০ লাখ পরিবার পাচ্ছেন ২০ কেজি করে ত্রাণ

Post Image

করোনা ভাইরাস জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ত্রাণের পরিধি বাড়াচ্ছে সরকার। মে মাসে ৫০ লাখ পরিবারকে মাসে ২০ কেজি করে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হবে। এত দিন ১০ কেজি করে এই সহায়তা দেওয়া হচ্ছিল। এ জন্য কোন জেলায় কত পরিবার এই সহায়তা পাবে, তা ঠিক করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এর ভিত্তিতে উপকারভোগীর নাম অন্তর্ভুক্ত করে ৩ মের মধ্যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জনসংখ্যা, দারিদ্র্যের হারসহ কয়েকটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে করা হিসাব অনুযায়ী বেশি ত্রাণ পাবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর, রাজশাহীসহ কয়েকটি জেলা। এভাবে সব জেলার জন্য পরিবারসংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপকারভোগীদের নামে করা কার্ডের ভিত্তিতে এই সহায়তা দেওয়া হবে।

তবে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিসহ ইতিমধ্যে যাঁরা বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আছেন, তাঁরা এই সুবিধা পাবেন না। তাঁরা তাঁদের কর্মসূচির সুবিধা পাবেন। এসব সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বাইরে যাঁরা ত্রাণের জন্য উপযুক্ত, তাঁদেরই ত্রাণসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আগামী জুন পর্যন্ত ত্রাণসহায়তা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে সরকার।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. শাহ কামাল মিডিয়াকে জানান, সব বিভাগের সঙ্গে কথা বলে এবং বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, সারা দেশে ১ কোটি ২৫ লাখ পরিবারের সহায়তার প্রয়োজন। এর মধ্যে ৫০ লাখ পরিবার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৩০ কেজি করে সহায়তা পায়। ১০ লাখ ৪০ হাজার পরিবার ভিজিবির সহায়তা পায় এবং তিন লাখ জেলে সহায়তা পায়। এর বাইরে যেসব দরিদ্র পরিবার আছে, তারা ত্রাণসহায়তা পাবে। রোজা ও সামনে ঈদ থাকায় চলতি মাসের চেয়ে মে মাসে ত্রাণের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।

করোনাভাইরাসজনিত দুর্যোগে দেশে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। এ জন্য তাঁদের খাদ্যসহায়তার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে মানবিক সহায়তা হিসেবে সারা দেশে সোয়া তিন কোটি মানুষকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ৬৪ জেলার প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ত্রাণের (জিআর) চাল বরাদ্দ করা হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৭৮৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ৮৬ হাজার ৮২৯ মেট্রিক টন। এতে উপকারভোগী পরিবার ৭৬ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬টি।
এ ছাড়া ৬৪ জেলায় এ পর্যন্ত নগদ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে ৪৭ কোটি ৬১ লাখ ২৯ হাজার। এর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ৩৮ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ৯৬৮ টাকা। এতে উপকারভোগী পরিবার ৪৩ লাখ ৫০ হাজার ৬৯৪টি। আর শিশুখাদ্য-সহায়ক হিসেবে বরাদ্দ করা হয়েছে ১০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ৭ কোটি ৫৯ লাখ ৩৬ হাজার ২৯৯ টাকা। এতে উপকারভোগী পরিবার ২ লাখ ৪০ হাজার ৬৭৯টি।

যে জেলায় যত পরিবার

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, মাঠপর্যায়ের তথ্য, পরিসংখ্যান বুরোর তথ্য, জনসংখ্যা, দারিদ্র্যের হার, সম্পদের প্রাপ্যতা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে মে মাসে সব জেলায় মোট ৫০ লাখ পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন, জামালপুর, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা জেলার প্রতিটিতে এক লাখ করে পরিবার এই সুবিধা পাবে। এ ছাড়া কুড়িগ্রাম, সিলেট, বরিশাল ও ময়মনসিংহ জেলার প্রতিটিতে ৯০ হাজার পরিবার এই সহায়তা পাবে। গাজীপুর, রাজশাহী ও রংপুর জেলা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার প্রতিটিতে ৮০ হাজার পরিবার এই সুবিধা পাবে। তালিকায় ৭৫ হাজার করে পরিবার আছে ফরিদপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, কক্সবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নওগাঁ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, বাগেরহাট, যশোর, কুষ্টিয়া, পটুয়াখালী, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায়। নোয়াখালী, কিশোরগঞ্জ ও দিনাজপুর জেলার একেকটিতে ৭৭ হাজার পরিবার এই সহায়তা পাবে। বাকি এলাকাগুলোতে ৪০ হাজার থেকে ৭২ হাজার পর্যন্ত পরিবার রয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মিডিয়াকে জানান, চলতি মাসে যাঁরা ত্রাণসহায়তা পেয়েছেন, মে মাসেও তাঁরা পাবেন। তবে তাঁদের মধ্যে যাঁরা অন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আছেন, তাঁরা এই ত্রাণের সুবিধা পাবেন না। আপাতত চিন্তা হলো জুন পর্যন্ত ত্রাণসহায়তা দেওয়া।