ওসমানী বিমানবন্দর ম্যানেজার হাফিজ শত কোটি টাকার মালিক!

Post Image

দেড় দশক ধরে আছেন একই জায়গায় । সরকারী চাকুরিবিধির নিয়ম ভেঙে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট । সোনা চোরাচালান, ডলার পাচার, মদ ব্যবসা থেকে শুরু করে সব অপকর্মই করছেন নির্ধিদায় । রাজনৈতিক রথি মহারথিদের সাথে রাখেন সুসম্পর্ক । সন্ত্রাসের গডফাদারা তার খুবই আপনজন। তিনি হাফিজ আহমদ। টাওয়ার কন্ট্রোলার থেকে ব্যবস্থাপক, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ।

সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের জমানায় শুরু করেছিলেন যাত্রা । সরকার বদল হয়েছে একাধিকবার । কিন্তু বদলায়নি হাফিজ আহমদের দপ্তর । বারবার বদলি চূড়ান্ত হলেও অদৃশ্য হাতের ইশারায় তিনি আছেন বহাল তবিয়তে। ক্যাসিনো ঘটনায় আলোচিত সমালোচিত দুই প্রভাবশালী নেতার আশীর্বাদে তিনি পার পেয়েছেন এ যাবত । বিনিময়ে গুনতে হয়েছে কয়েক কোটি টাকা।

হাফিজ আহমদ কয়েক’শ কোটি টাকার মালিক। ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট আছে তার। আলাদীনের চেরাগ বিমানবন্দর ব্যবস্থাপকের চেয়ার। আর এই চেয়ারকে পুঁজি করে তিনি পেয়েছেন গুপ্তধনের নাগাল । চেয়ারকে আগলে রাখতে চাঁদা হিসেবে নিয়মিত গুণতে হয় লাখ লাখ টাকা । চাঁদার টাকায় বেঁচে যান বারবার । ক্ষমতার পালাবদল হলেও তার ক্ষমতা থাকে অটুট। বিভিন্ন সুত্রের জানা গেলো তার হাড়ির খবর।

সিভিল এভিয়েশনের জনৈক কর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাফিজের দুর্বৃত্তপনার কাছে তারা অসহায়। কেউ প্রতিবাদ করলে তারও খেসারত দিতে হয়। গায়ে হাত তুলতেও তিনি দ্বিধা করেন না। তাই সব দেখেও না দেখার ভান করে আছেন তারা। লন্ডন থেকে দুবাই হয়ে আসা প্রায় প্রতিটি ফ্লাইটেই আসে তার সিন্ডিকেটের লাগেজ। এসব লাগেজে কখনও সোনা, কখনও মাদক আবার কখনও আসে ডলার। মোটা অংকের বিনিময়ে তিনি সিন্ডিকেটের লাগেজগুলো ছাড়িয়ে দেন সুকৌশলে । নিরাপত্তার অজুহাতে এসময় খুব কড়াকড়ি আরোপ করা হয় । কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না ।

বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বেসরকারী সংস্থার জনৈক কর্তা, ইমিগ্রেশনের ক’জন কর্তাব্যক্তি, সিভিল এভিয়েশনের কিছু দালাল হাফিজের অপকর্মের অন্যতম সহযোগী হিসেবে সিন্ডিকেটের দেখভাল করে থাকে। এছাড়া স্থানীয় একটি মাস্তান গ্রুপও আছে-যাদের কাজ সিন্ডিকেটের লাগেজ নিরাপদে যাতে পৌছায় সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

২০০৮ সাল থেকে ষ্টেশন ম্যানেজারের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি । একই কর্মস্থলে তিনি বছরের পর বছর ধরে কিভাবে থাকেন, তা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন । অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘ সময় ধরে ওসমানী বিমানবন্দরে থাকার ফলে ‘অনিয়মের সাম্রাজ্য’ গড়ে তুলেছেন হাফিজ আহমদ ।

হাফিজ আহমদের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলায় । বিগত বিএনপি সরকারের আমলে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ‘টাওয়ার কন্ট্রোলার’ পদে হাফিজকে নিয়ে আসেন ওসমানী বিমানবন্দরে। তাঁর আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন হাফিজ । ২০০৮ সালের নভেম্বরে ওসমানী বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান করেন হাফিজ আহমদ । এরপর প্রায় ১১ বছর ধরে একই পদে একই বিমানবন্দরে বহাল তরিয়তে রয়েছেন তিনি ।

২০১৬ সালে হাফিজ আহমদকে পদোন্নতি দিয়ে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বদলি করা হয়। আরো একাধিকবার তাকে বদলি করা হয় বলে জানা গেছে । তবে প্রত্যেকবারই উচ্চপর্যায়ে তদবির করে বদলিটি ঠেকিয়ে দেন হাফিজ, এমনও জনশ্রুতি আছে ।

অভিযোগ আছে সাধারন মানুষেরও । নিরাপত্তার অজুহাতে হয়রানী করা নিয়মিত বিষয় । ওসমানী বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন শত শত প্রবাসী যাতায়াত করেন । এই প্রবাসীদের আনতে ও বিদায় দিতে অনেকেই আসেন এয়ারপোর্টে । কিন্তু বিমানবন্দরে তাদেরকে পড়তে হয় হয়রানির কবলে । প্রায় ১ কিলো দুরে তাদেরকে আটকে দেয়া হয় । পার্কিং জোন থাকলেও তা ব্যবহার করতে দেয়া হচ্ছেনা । সেখানে দায়িত্বরত পিবিএন ও আনসার সদস্যরাও চাঁদাবাজির সাথে জড়িত । টাকা দিলে গাড়ী প্রবেশ করতে দেয়, না দিলে ১ কিলো দুরে আটকে থাকতে হয় ।

বিমানবন্দরের ভেতরে ডিউটি ফ্রি শপ থেকে অবাধে বাইরে আনা হয় মদ । সেই মদ চলে যায় বিমানবন্দরের পাশে গড়ে উঠা এক অভিজাত ক্লাবে । নগরীর বিভিন্ন হোটেলে ও অঘোষিত বারে এসব মদ সাপ্লাই করা হয় । হাফিজ আহমদের অপকর্মের অন্যতম একটি বিষয় এই মদ ব্যবসা ।

তাছাড়া ভিআইপি গেইট দিয়ে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও টাকা দিয়ে যে কেউ সে গেইট ব্যবহার করতে পারে । বিমানবন্দরের কনকোর্স হলের পিলারে এবং ফ্লাইটের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষার কক্ষের পিলারে ব্যবহৃত বিজ্ঞাপনের টাকা কোথায় যায়, তা নিয়েও আছে অনেক প্রশ্ন ।

সামগ্রিক বিষয় নিয়ে হাফিজ আহমদের সাথে কথা বলতে চাইলে-তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন । তার মোবাইল নাম্বারে বারবার কল দেয়া হলেও প্রথমে ধরেননি, পরে সাংবাদিক পরিচয় ও অভিযোগ জেনে-উর্ধতন মহলের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে রাজি হননি ।