মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রদলকে স্বাগত জানাল ছাত্রলীগ

Post Image

২৮ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে সরগরম হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। ৯ বছর পর ক্যাম্পাসে যাওয়া জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আজ মধুর ক্যান্টিনে গিয়েছে।আজ ছাত্রদলকে কোনো বাধার মুখে পড়তে হয়নি, তাদের স্বাগত জানিয়েছে ছাত্রলীগ।

বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা পৌনে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া, সহসম্পাদক মামুন খান নেতৃত্বে ২৫/৩০ জন নেতাকর্মী মধুর ক্যান্টিনে প্রবেশ করে।

পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব হাসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মধুর ক্যান্টিনে যান।সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন।কেন্দ্রীয় নেতাদের ক্যাম্পাসে পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কর্মীরা উজ্জীবিত হন।

ছাত্রদলের মধুর ক্যানটিনে যাওয়ার খবর পেয়ে সকাল ১০টার পর থেকেই মধুর ক্যান্টিনে যেতে শুরু করে ছাত্রলীগের হল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধুর ক্যানটিনে স্বাগত জানান।

ক্যান্টিনে অন্য টেবিলে বসা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি তুহিন কান্তি দাসের সঙ্গেও করমর্দন করেন ছাত্রদলের দুই নেতা।

ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা টেবিলে বসে চা পান করেন। আজ তাদের কোনো বাধার মুখে পড়তে হয়নি। তবে সেখানে তাঁদের তিন দিক থেকে ঘিরে বিরতিহীনভাবে স্লোগান দিতে থাকেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

এদিকে মধুর ক্যান্টিনে ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত রয়েছেন। ছাত্রদল নেতারা সেখানে গেলে অন্য সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে তাদের শুভেচ্ছা বিনিময় হয়।

ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মধুর ক্যান্টিনের ভেতরে উত্তর-পূর্ব কোণে বসেছেন। তাদের দক্ষিণ পাশে ছাত্রলীগ ও পশ্চিম পাশে ছাত্র ইউনিয়নসহ বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা বসেছেন।

এদিকে মধুর ক্যান্টিনের ভেতরে-বাইরে সকাল থেকে ছাত্রলীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অবস্থান নিয়েছেন। মুহুর্মুহু স্লোগানে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন তারা। সব ছাত্র সংগঠনের অবস্থানের কারণে দীর্ঘ ৯ বছর পর আবারো চাঙা মধুর ক্যান্টিন।

ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জানান, ডাকসু নির্বাচনের সর্বশেষ পরিস্থিতি ও তাদের অবস্থান জানাতে আজ মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করবেন তারা।

প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের মূল আকর্ষণ মধুর ক্যান্টিনে ক্রীড়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতৃত্বের আড্ডা এক সময় বেশ আকাঙিক্ষত ও রোমাঞ্চকর ব্যাপার ছিল।সংঘাতময় জাতীয় রাজনীতির মধ্যেও বিভিন্ন মত ও পথের ছাত্র সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের মধুর ক্যান্টিনে এক টেবিলে আড্ডা রাজনৈতিক সৌহার্দের জানান দিত।তবে প্রায় এক দশক ধরে মধুর ক্যান্টিনে সেই চিত্র নেই। শুধু মধুর ক্যান্টিন কেন ক্যাম্পাস হল কোথায় রাজনৈতিক সহাবস্থান নেই।

২৮ বছর পর অনুষ্ঠেয় ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফের আলোচনামুখর হয়ে উঠেছে ঢাবি।দশক পর মধুর ক্যান্টিন পুরোনো চিত্র ধারণ করতে যাচ্ছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ২০১০ সালের পর প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল ও বড় ধরণের শোডাউন করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন (ডাকসু) সামনে রেখে বৃহস্পতিবার সকালে ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে আসে। তারা ক্যাম্পাসে সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান দাবিতে এবং ডাকসু নির্বাচন ৩ মাস পিছিয়ে দেয়ার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (ভিসি) কার্যালয়ের কাছে স্মারকলিপি দেয়।

ভিসি অফিসে স্মারকলিপি দিয়ে তারা ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে। মিছিলে কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

৯ বছর আগে ২০১০ সালের ১৮ জানুয়ারি ছাত্রদল সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল ও সমাবেশ করে। ওইদিন ছাত্রলীগের হামলায় আহত হন তৎকালীন ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী।এরপর আর ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে দীর্ঘসময় অবস্থান করতে কিংবা মিছিল-শোডাউন করতে দেখা যায়নি।

ওই হামলার এক বছর পূর্তিতে হামলাকারীদের বিচার দাবিতে ছাত্রদল শাহবাগ থেকে থেকে মিছিল বের করে। মিছিলটি ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। এরপর ছাত্রদল আর ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করেনি।

আগামী ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।