মিত্রবাহিনীর দখলে ঢাকার আকাশ

Post Image

৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১। মিত্রবাহিনীর যুদ্ধের আজ তৃতীয় দিন। ঢাকার আকাশ পুরোপুরি মিত্রবাহিনীর দখলে। পাকবাহিনী দিশেহারা ভারতীয় বিমানবাহিনীর লাগাতার আক্রমণে।

ভারতের বিমানবাহিনীর হিসাব মতে, ১২ ঘণ্টায় ২৩২ বারে তেজগাঁও এবং কুর্মিটোলা বিমানঘাঁটিতে ৫০ টনের মত বোমা ফেলা হয়েছিল। এতে ২০ ফুট চওড়া গর্তের সৃষ্টি হয় রানওয়েতে।

বিমান আক্রমণ চলে পাকিস্তানি বাহিনীর কনভয়ের ওপরও। এতে ধ্বংস হয় পাকিস্তানি বাহিনীর ৯০টি গাড়ি। এ ছাড়াও পাকিস্তানি বাহিনীর সৈন্য বোঝাই কয়েকটা লঞ্চ এবং স্টিমার ধ্বংস হয়। বঙ্গোপসাগরে নৌবাহিনীর যৌথকমান্ডের সফল আক্রমণে পাকিস্তানি নৌবহরের গর্ব সাবমেরিন 'গাজী' ধ্বংস হয়। সাবমেরিনটি যুক্তরাষ্ট্র হতে পাকিস্তান ধার হিসাবে পেয়েছিল।

অন্যদিকে জামালপুর ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার, ঝিনাইদহ, সান্তাহার, ময়মনসিংহ ইয়ার্ড মিত্রবাহিনীর আক্রমণে ধ্বংস হয়ে যায়। ঢাকা, কুমিল্লা, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল এবং ময়মনসিংহের বিভিন্ন অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি দখল করে নেয় মিত্রবাহিনী। বাংলার উন্মুক্ত আকাশে মিত্রবাহিনীর বিমান অবাধে বিচরণ করে। বিমান হামলায় কয়েকশ’ পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয় জামালপুরে।

চারদিক থেকেই আসতে থাকে বিজয়ের খবর। ফলে মিত্রবাহিনী বীর বিক্রমে এগিয়ে যেতে থাকে। ভারতের ৫৭ মাউন্টেন ডিভিশন আখাউড়ার যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সাথে মিলিত হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী আখাউড়ার দক্ষিণ এবং পশ্চিমাংশ দিয়ে অবরোধ করে। পাকিস্তানি বাহিনী অবশেষে আত্মসমর্পণ করে। ফলে সম্পূর্ণরূপে শত্রুমুক্ত হয় আখাউড়া।

মিত্রবাহিনীর বিজয় দেখে জেনারেল নিয়াজী পাকিবাহিনীকে পেছনের দিকে সরে আসার নির্দেশ দেন। ভারতের অকৃত্রিম সাহায্য সহযোগিতা এবং কূটনৈতিক সফলতা বাংলাদেশকে দ্রুত মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যায়।

মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বাড়াতে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম এ জি ওসমানী জাতির উদ্দেশে বেতারে ভাষণ প্রদান করেন। এদিকে 'পূর্ব পাকিস্তান'-এর পুতুল শাসক গভর্নর ডা. মালিক দেশবাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন জানান। তিনি বলেন, ‘দেশ আক্রান্ত’।