মুক্তচিন্তা বিকাশের জায়গা বিশ্ববিদ্যালয় : রাষ্ট্রপতি

Post Image

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মুক্তচিন্তা বিকাশের জায়গা। চর্চা ও গবেষণার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্ম হয়। এসব জ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্রমে সমগ্র বিশ্বের সম্পদে পরিণত হয়। এর ফলে পৃথিবী সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।

শনিবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। রাবি স্টেডিয়ামে আয়োজিত এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ। এর আগে রাবির গ্রজুয়েটদের ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে বলেন, ‘‘উচ্চশিক্ষা যাতে সার্টিফিকেট সর্বস্ব না হয় কিংবা শিক্ষা যাতে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত না হয়, তা দেশ ও জাতির স্বার্থে সম্মিলিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এটা করতে না পারলে দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারদের সংখ্যা বাড়বে এবং বিশ্ব প্রতিযোগিতায় আমরা পিছিয়ে পড়ব।’’

শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শিক্ষকতা কেবল পেশা নয়, একটি আদর্শ। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকা এবং এগিয়ে চলার বিষয় মাথায় রেখে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে কেউ যেন প্রশ্ন তুলতে না পারে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘‘মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। কিন্তু ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধী চক্র শিক্ষাঙ্গনে বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মৌলবাদ ও উগ্রবাদকে উসকে দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চালায়। মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়।’’

রাষ্ট্রপতি বলেন, আজকাল বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অসহিষ্ণুতা, উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদের মতো নেতিবাচক কর্মকাণ্ড জাতি উদ্বেগের সঙ্গে প্রত্যক্ষ করছে। এর উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছে মুক্তচিন্তা ও সংস্কৃতি চর্চার অভাবে। আর দেশ ও জাতির উন্নয়নে রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিকল্প নেই। তাই দেশে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।

যুবসমাজকে জাতির অমিত শক্তি উল্লেখ করে গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, শিকড় ভুলে কেউ বড় হতে পারে না। এই সমাবর্তন শিক্ষার সমাপ্তি ঘোষণা করছে না। বরং উচ্চতর জ্ঞানভাণ্ডারে প্রবেশের দ্বার উম্মোচন করছে। তোমরা সেই বিশাল জ্ঞান রাজ্যে অবগাহন করে বিশ্বকে আরো সমৃদ্ধ করবে।

অনুষ্ঠানে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ও সেলিনা হোসেনকে সম্মানসূচক ডি’ লিট ডিগ্রি প্রদান করা হয়। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান আল-আরিফ। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরিটাস অধ্যাপক আলমগীর মো. সিরাজউদ্দীন। বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, রাবির উপাচার্য প্রফেসর এম আব্দুস সোবহান প্রমুখ।

সমাবর্তন শুরুর আগে রাবিতে ‘দেশরত্ম শেখ হাসিনা হল’ ও ‘শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান হল’ নামে দুটি হলের নামফলকের উম্মোচন করেন রাষ্ট্রপতি। সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে বিকেল ৫টায় রাবি স্টেডিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। সেখানে গান পরিবেশন করেন দেশের বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনসহ অন্য শিল্পীরা। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় নিবন্ধিত গ্রাজুয়েটরা আসন গ্রহণ করেন। বেলা সাড়ে ৩টায় সমাবর্তন শোভাযাত্রা বের করা হয়।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বেগম আকতার জাহান, রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমান, জেলা প্রশাসক এসএম আব্দুল কাদেরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দশম সমাবর্তনে অংশ নিতে মোট ৬ হাজার ৯ জন গ্রাজুয়েট নিবন্ধন করেন। তারা সকলে অংশ নেন। এর আগে ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।