নাইন-ইলেভেন ১৭তম বার্ষিকী আজ

Post Image

আজ সেই ভয়াল ১১ সেপ্টেম্বর (নাইন-ইলেভেন)। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলার ১৭তম বার্ষিকী।

২০০১ সালের এইদিনে আত্মঘাতী বিমান হামলায় ধ্বংস হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অহঙ্কার ও আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বা বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র। ভবনটি টুইন টাওয়ার নামে অধিক পরিচিত। হামলা চালানো হয়েছিল অন্যতম প্রধান পরাশত্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দফতর পেন্টাগনের পশ্চিম অংশেও। সন্ত্রাসীদের ছিনতাই করা চার বিমান হামলায় ৯০টিরও বেশি দেশের তিন হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন ১০ হাজারের বেশি। নিহতদের মধ্যে চার বিমানের ২৬৫ যাত্রী, বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের ও আশপাশের ২ হাজার ৬শ’ ছয়জন, পেন্টাগনের ১২৫ জন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭২ সদস্য ও ৫৫ সামরিক কর্মকর্তা। ১৯ জনের একটি সন্ত্রাসী দল চারটি বিমান ছিনতাই করে এ সিরিজ হামলা চালিয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের জন্যও ইতিহাসের ভয়াবহতম দিন ছিল এটি। হামলায় ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের মধ্যে একদিনেই মারা যান ৩৪৩ জন। আর আহত হন আরো দুই হাজার, যাদের অনেকের অবস্থাই ছিল গুরুতর।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সকাল বেলার ঘটনা। চমৎকার আবহাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে কর্মস্থলের দিকে যাচ্ছিলেন। সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট। আমেরিকান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১১ লোগান বিমানবন্দর থেকে লসঅ্যাঞ্জেলসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। বিমানটিতে ১১ জন ক্রুসহ ও ৭৬ জন (সন্ত্রাসী বাদে) যাত্রী ছিলেন। পাঁচ ছিনতাইকারী বিমানটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর বোয়িং ৭৬৭ বিমানটি মূল রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রায় বিশ হাজার গ্যালন জেট ফুয়েল থাকা বিমানটি কিছু সময় পরেই আঘাত হানে নিউইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের নর্থ টাওয়ারে। ১১০ তলা ভবনটির ৮০তম তলায় আঘাত হানে ওই বিমানটি। এতে মুহূর্তের মধ্যেই পুরো ভবনটি ধসে পড়ে।

আকস্মিক ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে পড়েন মার্কিনীরা। তাদের মনে নানা প্রশ্ন কি ঘটছে। অনেকে এটিকে মাতালের কাণ্ড বলেও মনে করেন। তবে তাদের ধারণা পাল্টে যায় ঠিক ১৮ মিনিটের ব্যবধানে। প্রথম বিমান হামলার পর একই বিমানবন্দর থেকে লসঅ্যাঞ্জেলসগামী ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ১৭৫ ফ্লাইটের আরেকটি বোয়িং ৭৬৭ বিমান সকাল সোয়া ৮টার দিকে যাত্রা শুরু করে। বিমানটিতে ৯ জন ক্রু ৫১ জন (সন্ত্রাসী বাদে) যাত্রী ছিলেন। পাঁচজন ছিনতাইকারী বিমানটি নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে সকাল ৯টা ৩ মিনিটের সময় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সাউথ টাওয়ারের ৬০তম তলায় হামলা চালায়। এ সময় প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হয়, ভবনের বিভিন্ন অংশ খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে আশপাশের ভবনগুলোর ওপর ছড়িয়ে পড়ে। তখনই মার্কিনীরা বুঝতে পারে তাদের দেশের ওপর সন্ত্রাসী হামলা শুরু হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে স্মরণকালের এ হামলা চালানোর জন্য সন্ত্রাসীরা চারটি যাত্রীবাহী বিমান হাইজ্যাক করে। মোট উনিশজন জঙ্গি সরাসরি অংশগ্রহণ করে হামলাতে।

সন্ত্রাসীদের ছিনতাই করা বিমান চারটির মধ্যে দুটির লক্ষ্য ছিল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর ও দক্ষিণ টাওয়ারে আঘাত করা। সন্ত্রাসীরা এ লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছিলেন। তাদের তৃতীয় বিমানটি আঘাত করে অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের হেড কোয়ার্টার পেন্টাগনে। আমেরিকান এয়ারলাইন্স ৭৭ ফ্লাইটের বিমানটি ওয়াশিংটন ডুলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সকাল ৮টা ২০ মিনিটে লসঅ্যাঞ্জেলসের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বোয়িং ৭৫৭ বিমানটিতে ৬জন ক্রুসহ মোট ৫৩ জন (সন্ত্রাসী বাদে) যাত্রী ছিলেন। পাঁচজন সন্ত্রাসী বিমানটি ছিনতাই করে সকাল ৯টা ৪৩ মিনিটের সময় ভার্জিনিয়ায় অবস্থিত প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দফতর পেন্টাগনে হামলা চালায়।

নিউজার্সির ন্যুয়ার্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৯৩ নামে চতুর্থ বিমানটি ৭ ক্রু ও ৩৩জন যাত্রী (সন্ত্রাসী বাদে) নিয়ে উড়েছিল সানফ্রান্সিসকোর উদ্দেশ্যে। সকাল ৮টা ৪২ মিনিটে য়াত্রা করার ৪০ মিনিটের মধ্যেই বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় চার ছিনতাইকারী। বিমানটি দেরিতে যাত্রা করায় যাত্রীরা আগেই জেনে গিয়েছিলেন টুইন টাওয়ারে হামলার বিষয়টি। ছিনতাইকারীরা বিমানটি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর তারা বুঝতে পারেন আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটতে চলেছে। কয়েক যাত্রী অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নিয়ে ককপিটে হামলা করেন, বাধা দেন ছিনতাইকারীদের। নিউইয়র্ক টাইমসের ভাষ্য, ছিনতাইকারীদের সঙ্গে রীতিমতো ধস্তাধস্তি চলে। সকাল ১০টা ৩ মিনিটের সময় পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে আছড়ে পড়ে বিমানটি।

হামলাকারীরা বিমানটিকে কোথায় নিতে চেয়েছিল তা পরিষ্কার না হলেও বিশ্লেষকরা মনে করেন, হোয়াইট হাউজ, মেরিল্যান্ডে প্রেসিডেন্সের অবকাশ যাপন কেন্দ্র ‘ক্যাম্প ডেভিড’ অথবা পশ্চিম উপকূলে থাকা কয়েকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোনো একটিতে হামলা চালানো ছিল তাদের লক্ষ্য।

নাইন-ইলেভেন হামলার প্রতিবাদেই জঙ্গিবাদবিরোধী যুদ্ধ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। এই যুদ্ধের অংশ হিসেবে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ এখনো অব্যাহত আছে।