সেরেনার ‘লিঙ্গবৈষম্যে’র অভিযোগে টেনিস কর্তৃপক্ষের সমর্থন

Post Image

টেনিসে ‘লিঙ্গবৈষম্য’ আছে। সেটি ইউএস ওপেনের ফাইনালে সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন ২৩ বারের গ্র্যান্ড স্লাম বিজয়ী তারকা সেরেনা উইলিয়ামস। তাঁর এই অভিযোগ পাচ্ছে সমর্থন। এমনকি ডব্লুটিএও তাঁর এই অভিযোগ আমলে নিয়েছে।

জাপানি তারকা নওমি ওসাকা আফসোস করতেই পারেন। প্রথম জাপানি হিসেবে গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা জয়ের পর কোথায় তাঁকে নিয়ে সারা বিশ্ব মেতে উঠবে তা না, ইউএস ওপেনের ফাইনালটা পুরোপুরি আচ্ছন্ন সেরেনা উইলিয়ামসের বিতর্কে। আম্পায়ার কার্লোস রামোসের বিপক্ষে তিনি যেসব অভিযোগ তুলেছেন—গোটা দুনিয়া এখন ব্যস্ত তারই বিশ্লেষণে। আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে নিজের পয়েন্ট আর গেম কাটার ব্যাপারটি তিনি মেনে নিতে পারেননি। আম্পায়ারকে ‘চোর’ বলেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন ‘লিঙ্গবৈষম্যে’র।

এ নিয়েই তোলপাড় গোটা টেনিস দুনিয়া। যে অভিযোগে সেরেনার বিরুদ্ধে পয়েন্ট কেটেছেন আম্পায়ার, সে আচরণ, অর্থাৎ হতাশা প্রকাশে কোর্টে র‍্যাকেট ছুড়ে মারার ঘটনা অহরহই করে থাকেন পুরুষ খেলোয়াড়েরা। সেরেনা আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামের ফাইনালে এ অসামঞ্জস্যই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। সেরেনার প্রতিবাদের পর ব্যাপারটি নিয়ে নড়েচড়ে বসছে ডব্লুটিএ। সংস্থার ট্যুর চিফ স্টিভ সিমনস টেনিস কোর্টের এমন বৈষম্য স্বীকার করে এটি সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করার কথা জানিয়েছেন।

ফাইনাল ম্যাচ চলার সময় গ্যালারিতে বসা কোচের কাছ থেকে নির্দেশনা নিয়েছেন সেরেনা—এমন অভিযোগ তোলেন আম্পায়ার রামোস। ডব্লুটিএ ট্যুরে এমন কিছু বৈধ হলেও গ্র্যান্ডস্লামে এটি আচরণবিধি ভঙ্গ। এই অভিযোগে আম্পায়ার সেরেনার একটি পয়েন্ট কেটে নিলে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন যুক্তরাষ্ট্রের তারকা। তিনি আম্পায়ারের উদ্দেশে বলেন, ‘জয়ের জন্য আমি কখনোই প্রতারণা করি না। প্রয়োজনে হেরে যাব।’ ব্যাপারটা এখানে শেষ হয়ে গেলে খুব ভালো হতো। কিন্তু এটি আরও গুরুতর আকার ধারণ করে যখন সেরেনা ৩-২-এ পিছিয়ে পড়েন। এ সময় হতাশায় নিজের র‍্যাকেট ছুড়ে মারেন তিনি। আম্পায়ার এটিকে আচরণবিধি ভঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত করে গোটা একটা গেমই কেড়ে নেন ২৩টি গ্র্যান্ড স্লাম বিজয়ী তারকার কাছ থেকে।

সেরেনা এবার আম্পায়ারের বিরুদ্ধে ‘লিঙ্গবৈষম্যে’র অভিযোগ তোলেন। চিৎকার করে বলেন, ‘আপনি মিথ্যাবাদী। জীবনে আর কখনোই আপনি আমার ম্যাচে আম্পায়ারিং করতে আসবেন না।’ সেরেনা বলেন, ‘এই আম্পায়ার কখনোই ছেলেদের কাছ থেকে ম্যাচ কেড়ে নিতে পারে না। কারণ ওরা তাঁকে “চোর” বলে।’

সেরেনাকে সমর্থন করেছেন কিংবদন্তি বিলি জিননের মতো কিংবদন্তি। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘যখন কোনো মেয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে, তখন তাকে বলা হয় হিস্টিরিয়াগ্রস্ত। কিন্তু পুরুষেরা একই জিনিস করলে বলা হয়, বাহ্! এ তো খোলাখুলি কথা বলতে ভয় পায় না। ছেলেটার শাস্তিও হয় না। এটি পরিষ্কার দ্বিচারিতা। ধন্যবাদ সেরেনা উইলিয়ামস, এই দ্বিচারিতাকে সামনে নিয়ে আসার জন্য।’

সেরেনাকে সমর্থন করেছেন আরেক নারী টেনিস তারকা ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কাও, ‘এটি যদি পুরুষদের খেলা হতো, তাহলে এমন কিছুই হতো না।’

ডব্লুটিএ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ডব্লুটিএ বিশ্বাস করে, কোর্টে ছেলে কিংবা মেয়ে খেলোয়াড়দের প্রকাশ করা আবেগের সহনীয় মাত্রা একই হওয়া উচিত। কোর্টে নারী-পুরুষ সব খেলোয়াড়কে যেন সমান চোখে দেখা হয়। সবার প্রতি একই বিচার প্রতিষ্ঠায় সংস্থা কাজ করে যাবে। আমরা বিশ্বাস করি না যে ইউএস ওপেনের ফাইনালে সেরেনার প্রতি সেই আচরণ নিশ্চিত হয়েছে।’