বিদ্যমান শ্রম আইনে সুরক্ষা মাত্র ১৫ শতাংশ শ্রমিকের

Post Image

দেশের বিদ্যমান শ্রম আইন শ্রম শক্তির মাত্র ১৫ শতাংশ শ্রমিককে আইনি সুরক্ষা দেয়। বাকিরা এর বাইরে থেকে যাচ্ছে।

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়নের (এনডিডব্লিডব্লিউইউ) নেতারা।

বক্তারা বলেন, শ্রমশক্তির অন্যতম গৃহশ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, হোম ওয়ার্কার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, ছোট যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক পরিবহন শ্রমিক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, হাকারসহ গ্রামীণ ও নগর দরিদ্রদের শ্রম আইন বহির্ভূত রাখা হয়েছে। এই সকল অপ্রাতিষ্ঠানিক ও অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য কোনো আইন নেই, নেই কোনো নীতিমালা।

তারা অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার গৃহশ্রমিকদের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করলেও তার বাস্তবায়ন নেই। এমন কি নীতিমালায় নিবন্ধনের বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও তা উপেক্ষিত। গৃহশ্রমিকরা নানাভাবে অত্যাচার-নির্যাতনের স্বীকার হলেও তারা আইনি কোনো সুরক্ষা পাচ্ছে না। যেহেতু ২০১৫ সালের গৃহ শ্রমিক নীতিমালাটির কোনো আইনি ভিত্তি নেই, তাই এটি বাস্তবায়নও কঠিন হয়ে পড়েছে। গৃহ শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ আইন করতে হবে। আইন না থাকার কারণে গৃহশ্রমিকদের বারবার নির্যাতনের স্বীকার হতে হচ্ছে। বিদ্যমান শ্রম আইনে কৃষি শ্রমিক ও গৃহশ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেন নেতারা।

সম্প্রতি এনডিডব্লিডব্লিউইউ ও সলিডারিটি সেন্টারের করা এক জরিপে ৩৫০ জনের বেশি গৃহ শ্রমিকদের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে। তাতে দেখা গেছে ৯৭ শতাংশ শ্রমিক সুরক্ষার জন্য বাধ্যতামূলক আইন চান, ৫৯ শতাংশ শ্রমিক সংগঠিত হতে ও ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হতে চায়, ৯৬ শতাংশ গৃহ শ্রমিক অন্যান্য সেক্টরের মতো ন্যূনতম মজুরি চায়, ২২ শতাংশ খণ্ডকালীন গৃহ শ্রমিক কোনো না কোনো সময় তাদের কর্মস্থলে নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং ৪১ শতাংশ স্থায়ী গৃহ শ্রমিক যারা বাসায় থেকে কাজ করে কোনো না কোনো সময় তাদের কর্মস্থলে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। যদিও তথ্য নেয়ার সময় নিয়োগকারীর উপস্থিতির কারণে অনেক গৃহ শ্রমিক উত্তর দিতে অপারগ হয়েছে।

প্রবাসী ও দেশের অভ্যন্তরে কর্মরত শ্রমিকদের সুরক্ষায় ১০ দফা দাবিও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ২০১৫ সালের গৃহ শ্রমিক নীতিমালা শতভাগ বাস্তবায়ন, নীতি নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সেল গঠন ও পরিদর্শন টিম গঠন, শিশুশ্রম বন্ধ, গৃহশ্রমিকদের নিবন্ধন, নির্যাতনের মামলাগুলো দ্রুত বিচার, গৃহশ্রমিদের মর্যাদা দেয়া, প্রবাসী গৃহশ্রমিক নির্যাতিত হচ্ছে তার বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করা এবং তাদের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের সাহায্য এবং বিদেশ থেকে যেসকল শ্রমিক নির্যাতিত/ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসে তাদের বা পরিবারের জন্য (মৃত শ্রমিকদের ক্ষেত্রে) ক্ষতিপূরণ আদায়ে সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা করা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুর্শিদা আক্তার। উপদেষ্টা আবুল হোসেন, জাহান আরা হক, সংগঠনের সভাপতি আমেনা বেগম, সলিডারিটি সেন্টারের কান্ট্রি প্রতিনিধি কেলি ফে রডরিস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।