সাকিব-নাজমুলদের ঘূর্ণিতে জয় বাংলাদেশের

Post Image

রান দিলেও ৩ উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ। ছবি: এএফপিরান দিলেও ৩ উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ। ছবি: এএফপি
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১২ রানে হারিয়ে সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতায় ফিরেছে বাংলাদেশ

টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে ধারাবাহিক ভালো বোলিং করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ১ ওভারে দিয়েছিলেন ৯ রান। দ্বিতীয় ম্যাচে তাঁকে দলে না দেখে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। বিশেষ করে তৃতীয় ওভারে রুবেল হোসেন ১৬ রান দেওয়ার পর মিরাজের দলে না থাকা নিয়ে প্রশ্নটা আরও জোরালো হয়েছে। তবে ম্যাচটা জিতে প্রশ্নটা মাটিচাপা দিয়েছেন তাঁর সতীর্থরাই। লডারহিলে আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১২ রানে হারিয়ে সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতায় ফিরেছে বাংলাদেশ।

তামিম-সাকিবের ব্যাটে লড়াইয়ের পুঁজি পেয়েছিল বাংলাদেশ। ৫ উইকেটে দলের ১৭১ রানের মধ্যে তামিম ও সাকিবের সম্মিলিত অবদান ১৩৪। বোলিংয়েও বাংলাদেশের জয়ে দারুণ ভূমিকা রেখেছেন সাকিব। মাত্র ১৯ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৫০ রানে ৩ উইকেট নেন মোস্তাফিজ। তবে ২৮ রানে ৩ উইকেট নেওয়া নাজমুল চাপের মধ্যে দারুণ বোলিং করে ছাপিয়ে গেছেন মোস্তাফিজকে।

তাড়া করতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটাও তেমন ভালো হয়নি। প্রথম ওভারে মাত্র ২ রান দিয়েছেন মিরাজের বদলে দলে সুযোগ পাওয়া বাঁহাতি পেসার আবু হায়দার রনি। পরের ওভারে এভিন লুইসকে (১) লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন মোস্তাফিজুর রহমান। ভালো শুরু পেয়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু তৃতীয় ওভারে রুবেল ১৬ রান দিয়ে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন। মোস্তাফিজই সেই ভীতি দূর করেছেন বিপজ্জনক রাসেলকে তুলে নিয়ে।

১০ বলে ১৭ রান করা রাসেল ধীরে ধীরে হাত খুলতে শুরু করেছিলেন। চতুর্থ ওভারে মোস্তাফিজের দারুণ এক ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন এই ক্যারিবিয়ান বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান। কিছুটা শর্ট অব লেংথ থেকে রাসেলের বুকসমান উচ্চতায় বল তুলেছিলেন মোস্তাফিজ। বলটা রাসেলের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে মুশফিকের গ্লাভসে। পরের বলে মারলন স্যামুয়েলসকেও তুলে নিতে পারতেন মোস্তাফিজ। নিখুঁত লেংথের ডেলিভারিটি স্যামুয়েলসের ব্যাটে লেগে বেরিয়ে যায় উইকেটরক্ষক ও প্রথম স্লিপের মাঝ দিয়ে। পরের বলেই বিশাল এক ছক্কা মেরে লড়াইয়ে ফিরে আসার ইঙ্গিত দেন স্যামুয়েলস।

কিন্তু স্যামুয়েলসকে বেশিক্ষণ থাকতে দেননি সাকিব। পঞ্চম ওভারে তাঁর খাটো লেংথের ডেলিভারি বেশ আলসেমি করেই মিডউইকেট দিয়ে তুলে মেরেছিলেন স্যামুয়েলস। কিন্তু লিটন দাসের দারুণ এক ক্যাচে পরিণত হতে হয় তাঁকে। ৬ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৫২। এখান থেকে স্কোরটা ৮ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ৬০ হয়েছে রুবেলের কল্যাণে। অষ্টম ওভারে দীনেশ রামদিনকে তুলে নিয়ে মাত্র ৩ রান দিয়েছেন এই পেসার। রিভিউ নিয়ে তাঁকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেছেন রুবেল।

১০ ওভার শেষে টি-টোয়েন্টির বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ৭৬। অর্থাৎ ৬০ বলে ৯৬ রান দরকার ছিল ক্যারিবীয়দের। এখান থেকে ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচার-রোভম্যান পাওয়েল জুটিকে আরও চেপে ধরেন বোলাররা। বাউন্ডারি পেতে হাঁসফাঁস করেছেন এই দুই ব্যাটসম্যান। ১৪তম ওভারে ফ্লেচারকে ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিলেন আবু হায়দার। কিন্তু মিডউইকেটে তাঁর ক্যাচ ফেলে দেন আরিফুল হক। ওই ওভারেই আবু হায়দারকে টানা দুই বলে দুই ছক্কা মেরে লড়াইয়ে ফেরার ইঙ্গিত দেন পাওয়েল।

শেষ ৬ ওভারে ৬২ রান দরকার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ১৫তম ওভারের প্রথম বলে নাজমুলকে ছক্কা মারলেও পরের বলেই উইকেট দিয়েছেন ফ্লেচার (৪৩)। নাজমুলের মাপা লেংথের বল না বুঝেই মিডউইকেটে খেলতে গিয়ে সাকিবকে ক্যাচ দেন ফ্লেচার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩০ বলে ৫০ রানের দূরত্বে থাকতে ১৬তম ওভার করেছেন মোস্তাফিজ। এই ওভারে ৯ রান দেন তিনি। পরের ওভারে ক্যারিবীয় অধিনায়ক কার্লোস ব্রাফেটকে (১১) তুলে নেওয়ার সঙ্গে মাত্র ৩ রান দেন সাকিব। ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বোলিংয়েও (৪-০-১৯-২) দারুণ অবদান রেখেছেন অধিনায়ক।

সাকিবের অসাধারণ বোলিংয়ের পর ১৮ বলে ৩৯ রানের কঠিন দূরত্বে দাঁড়িয়ে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। উইকেটে তখনো বিপজ্জনক পাওয়েল। ১৮তম ওভারে রুবেল মাত্র ৮ রান দেওয়ার সঙ্গে পাওয়েলকেও তুলে নিতে পারতেন। কিন্তু কভার থেকে ছুটে এসে পাওয়েলের ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন সাকিব। সেই পাওয়েলই মোস্তাফিজের করা পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে জমিয়ে তোলেন লড়াই। ১০ বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন ২৬ রানের দূরত্বে। কিন্তু পরের বলেই পাওয়েলকে (৪৩) তুলে নিলেও এই ওভারে ১৬ রান দিয়েছেন মোস্তাফিজ।

শেষ ওভার ১৫ রান দরকার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। নাজমুল এসে অসাধারণ বোলিং করেছেন। মাত্র ২ রান দেওয়ার পাশাপাশি নিয়েছেন ২ উইকেট। এতেই সিরিজে ফেরার সঙ্গে টানা পাঁচ ম্যাচ হারের পর জয়ের মুখ দেখল বাংলাদেশ।