ডিআইজি মিজানের কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান

Post Image

পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্নার আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ কোটি টাকার বেশি সম্পদের খোঁজ মিলেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে।

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে ডিআইজি মিজানের নামে ৪৬ লাখ ৩২ হাজার ১৯১ টাকার এবং তার স্ত্রীর নামে ৭২ লাখ ৯০ হাজার ৯৫২ টাকার অসঙ্গতিপূর্ণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে।

এছাড়া, মিজানুর রহমানের ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান স্বপন ও ভাগনে পুলিশের এসআই মাহামুদুল হাসানের নামেও স্থাবর ও অস্থাবর ব‌্যাপক সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। দুদকের ধারণা, এসব সম্পদের প্রকৃত মালিক হচ্ছেন ডিআইজি মিজান। এ কারণেই অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের উপ-পরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন থেকে দুদক আইনের ২৬(১) ধারায় মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রীর নামে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য‌্য রাইজিংবিডিকে এসব তথ‌্য নিশ্চিত করেছেন।

দুদক জানায়, মিজানুর রহমান আয়কর নথিতে তার নামে স্থাবর ও অস্থাবর মোট ১ কোটি ৫৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৬৩ টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন। তবে দুদকের অনুসন্ধানে আয়কর নথির বাইরে ৪৬ লাখ ৩২ হাজার ১৯১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের খোঁজ মিলেছে।

অন‌্যদিকে, সোহেলিয়া আনার রত্না আয়কর নথিতে স্থাবর ও অস্থাবর মোট ৮৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩৫ টাকার সম্পদের তথ‌্য দিয়েছেন। অথচ আয়ের উৎস পাওয়া যায় মাত্র ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৯৮৩ টাকা। অর্থাৎ দুদকের অনুসন্ধানে আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৭২ লাখ ৯০ হাজার ৯৫২ টাকার সম্পদ রয়েছে বলে দুদক মনে করে। এছাড়া, মিজানুর রহমানের ছোট ভাইয়ের নামে রাজধানীর বেইলি রোডে বেইলি রোজ নামের ২ হাজার ৪০০ বর্গফুটের ফ্ল‌্যাট ও ভাগনে মাহামুদুল হাসানের নামে চাকরিতে প্রবেশের আগেই ঢাকার পাইওনিয়ার রোডে ১ হাজার ৯১৯ বর্গফুটের একটি ফ্ল‌্যাটের সন্ধান পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ডিআইজি মিজান তাদের নামে এসব সম্পদ করেছেন। এ কারণেই দুদক সম্পদ বিবরণী নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর আগের চলতি বছরের ৩ মে অবৈধ সম্পদসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে প্রায় ৭ ঘণ্টা ডিআইজি মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিআইজি মিজান বলেন, ‘আমার যে সম্পদ আছে, এ বিষয়ে দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছেন। ট্যাক্স ফাইলের বাইরে আমার কোনো সম্পদ নেই। বাকিটুকু তদন্ত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।’

আত্মীয়-স্বজনদের নামে সম্পদ আছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আবারও বলি, যে যে জায়গায় সম্পদ আছে বা আমার আত্মীয়-স্বজনের নামে যে সম্পদ আছে তা আমার ট্যাক্স ফাইলে আছে।’

নারী সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বলব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমার বিরুদ্ধে ইনকোয়ারি আছে। সুতরাং ওনারাই ভালো বলতে পারবেন, কতটুকু প্রমাণিত হয়েছে আর কতটুকু প্রমাণিত হয়নি। সাংবাদিক এক ভদ্রমহিলার সঙ্গে আমার কনভারসেশন হয়েছে, এজন্য আমি সরি। এজন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।’

গত বছরের জানুয়ারিতে পুলিশ সপ্তাহ শুরু হওয়ার আগে পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে স্ত্রী-সন্তান রেখে আরেক নারীকে জোর করে বিয়ে করার অভিযোগ ওঠে এবং বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়। সে সময় ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্বে থাকা মিজানুর রহমানকে ডিএমপি থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।

নামে-বেনামে ডিআইজি মিজানুর রহমানের শত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দুদকের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীকে ১০ ফেব্রুয়ারি অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

দুদক জানায়, পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে মিজানুর রহমান তদবির, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। চাকরিজীবনে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা উপায়ে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার নামে-বেনামে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি রয়েছে। একাধিক ব্যাংক হিসাবে রয়েছে বিপুল অর্থ ও ফিক্সড ডিপোজিট। এমনকি দেশের বাইরে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ডিআইজি মিজানুর রহমান ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত জানুয়ারিতে তাকে ডিএমপি থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।