যাত্রী হয়রানি হলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার

Post Image

পরিবহন সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের হয়রানি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মঙ্গলবার দুপুরে মহাখালী বাস টার্মিনালে আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের কাছ থেকে নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাত্রী হয়রানিমূলক কোনো আচরণ বরদাশত করা হবে না। টার্মিনাল থেকে গাড়ির কাগজ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার পর গাড়ি বের করতে দেয়া হবে। টার্মিনালে হলুদ রেখা দেয়া হয়েছে। গাড়ি হলুদ রেখা অতিক্রম করলেই তাকে অবশ্যই টার্মিনাল ছাড়তে হবে। ঢাকা শহরের প্রবেশ ও বাহিরপথ যানজটমুক্ত রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোনো ধরনের লক্কড়-ঝক্কড় বাস রাস্তায় নামতে দেয়া হবে না।

পরিবহন শ্রমিকদের উদ্দেশে কমিশনার বলেন, আপনারা মাদক খাবেন না। নেশাগ্রস্ত হয়ে নিজের সঙ্গে যাত্রীদেরও বিপদে ফেলবেন না। জঙ্গির পর মাদকের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। যতদিন ঢাকা মহানগরে মাদক থাকবে তত দিন আমাদের অভিযান চলবে।

ঈদে ঢাকা মহানগরীতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঈদে নগরীর ফাঁকা বাসাবাড়ি, অফিস, শপিংমল সব জায়গায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। যেসব নিরাপত্তাকর্মী আছে তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঈদের প্রতিটি জামাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা থাকবে। অপরাধ করে কেউ যেন গাড়ি নিয়ে দ্রুতগতিতে পালাতে না পারে সেজন্য শহরের বিভিন্ন সড়কে জিগজ্যাগ করে দেয়া হবে। নিয়মিত চেকপোস্ট ও তল্লাশি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

এ সময় তিনি হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম শেষপর্যায়ে বলে জানান।

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে, মাসখানেকের মধ্যে অভিযোগপত্র দেয়া সম্ভব হবে। তবে নির্দিষ্ট করে দিনক্ষণের কথা বলা সম্ভব নয়। তদন্তাধীন বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অভিযোগপত্র দেয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছি।’

হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনাটিকে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, হলি আর্টিজান হামলার ঘটনা ছিল দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত। এটি কোনো সাধারণ অপরাধ ছিল না। এ ঘটনায় বহু কর্নার থেকে বহু লোক জড়িত ছিল। এই হামলায় জড়িতদেরও বহু উদ্দেশ্য ছিল।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, দেখুন মামলার তদন্ত একটি জটিল প্রক্রিয়া। একটি অভিযোগনামা যখন বিজ্ঞ আদালতে যায় সেই অভিযোগ প্রমাণ করার জন্য আমাদের মুখের কথায় হয় না। এখানে কিন্ত সারকামসটেন্স এভিডেন্স এবং আমাদের ফিজিক্যাল এভিডেন্স এবং সায়েন্টিফিক এভিডেন্স-সব ধরনের এভিডেন্স প্রয়োজন হয়।

জড়িতদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ শেষপর্যায়ে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, হলি আর্টিজানে অভিযানের সময় হামলাকারীরা নিহত হয়েছে। এর পেছনে যারা রসদ দিয়েছে, মদদ দিয়েছে, ঘর ভাড়া দিয়েছে তাদের আমরা শনাক্ত করেছি। এর মধ্যে কিছু কিছু বন্দুকযুদ্ধে এনকাউন্টারে মারাও গিয়েছে। বাকি যারা আছে তাদের উপযুক্ত শাস্তি বিধান করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন প্রয়োজন। তাদের প্রত্যেকের অপরাধকে খুঁজে বের করা, তাদের প্রত্যেক ব্যক্তির স্বার্থ, উদ্দেশ্য এবং তাদের এক্টিভিটিজ কি ছিল তা আলাদা আলাদাভাবে শনাক্ত করা প্রয়োজন। এর পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য তথ্যউপাত্ত জোগাড় করা- এটা কিন্তু অনেক কঠিন বিষয়। সেক্ষেত্রে কোনো মামলার তদন্ত হয়তো বেশি সময় লাগে, কোনো মামলার কম সময় লাগে। হলি আর্টিজান মামলার তদন্ত একেবারে শেষপর্যায়ে। আমরা আশা করি মাস খানেকের মধ্যে অভিযোগপত্র বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করতে পারব।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে কূটনীতিকপাড়া গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাদের ঠেকাতে গিয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। ওই ঘটনায় গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন, হত্যাকাণ্ড ও তথ্য গোপনের অভিযোগে তিনটি মামলা করে পুলিশ।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম, যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) মোসলেহ উদ্দিন আহমদ, যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, ঢাকা জেলা বাস মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি ওসমান আলী, সাধারণ সম্পাদক সহিদুল্লাহ (সদু)।