চট্টগ্রামে নেশাসক্ত শিশু ৫৫ হাজার

Post Image

শনিবার দুপুর ১২টা। নগরীর কোতোয়ালি থানার পশ্চিম পাশে ফুটপাতে বসে আছে ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী দুই যুবক। তাদের হাতে আছে একটি করে পলিথিন। যেখানে আছে হলুদ রঙের কিছু বস্তু। কিছুক্ষণ পরপর তাদের ওই পলিথিনের ভেতর মুখ ঢুকিয়ে শ্বাস নিতে দেখা যায়।

স্থানীয় লোকজন জানান, তারা নেশা করছে। এ নেশার নাম ড্যান্ডি। শুধু ড্যান্ডি আসক্তেই তারা সীমাবদ্ধ নয়, একই সঙ্গে সেবন করে চলেছে গাঁজাও। নেশার জগতে বুঁদ এ দুই যুবক পথচারী দেখলে নানাভাবে প্রলাপ বকে চলেছে। এ সময় কয়েকজন স্কুল ছাত্রও তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। একটি বেসরকারি সংগঠনের হিসাব মতে, চট্টগ্রামে নেশাসক্ত শিশুর সংখ্যা ৫৫ হাজার।

নগরীর রাস্তাঘাটে, বস্তিসহ বিভিন্ন স্টেশনে প্রকাশ্যে দেখা যায় শিশুরা কাজ করতে করতে পলিথিনে মুখ ঢুকিয়ে নেশা নিচ্ছে। জুতায় ব্যবহৃত গামকে এসব শিশু পলিথিনে ঢুকিয়ে তার তীব্র গন্ধ শুঁকে নেশা করছে। চট্টগ্রাম রেলস্টেশন এলাকায় রাকিব নামে এক পথশিশু বলেছে, ‘পলিথিনে জুতার গাম ঢুকিয়ে শ্বাস নিলে মাথা ঝিমঝিম করে। ঘুম ঘুম ভাব হয়। এটা তার ভালো লাগে।’ নেশার জগতে এর নাম ‘ড্যান্ডি’। চট্টগ্রামে এভাবে ‘ড্যান্ডি’ দিয়েই নেশার জগতে ঢুকছে শিশুরা। ড্যান্ডি আসক্ত শিশুরাই ধীরে ধীরে ইয়াবাসহ মাদক সেবনে জড়িয়ে পড়ছে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অপরাজেয় বাংলাদেশের হিসাব মতে, বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগে পথশিশুর সংখ্যা ৫৫ হাজার। এর মধ্যে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন, কোতোয়ালি, রিয়াজুদ্দিন বাজার এলাকায় পথশিশুর সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। এর অধিকাংশ শিশু ড্যান্ডি ও ইয়াবা আসক্ত। শুধু তাই নয়, এসব শিশু সামান্য অর্থের বিনিময়ে জড়িয়েছে মাদক পাচারেও।

নগরীর সদরঘাট থানার ওসি মো. নেজাম উদ্দিন জানান, ‘নগরীর সবচেয়ে বড় মাদকের আখড়া বরিশাল কলোনির মূল মাদক ব্যবসায়ীরা এলাকা ছাড়া। তারা এখানে ২৫ থেকে ৩০ জন শিশু এবং নারীকে ব্যবহার করে এ ব্যবসা ঠিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। জড়িত শিশুরা সবাই ছন্নহারা।’

এ প্রসঙ্গে কোতোয়ালি থানার ওসি মো. মহসিন যুগান্তরকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত সক্রিয় হলে ফুটপাত, সড়ক ও বস্তিতে প্রকাশ্যে মাদক সেবন কমে আসত। কেননা সেবনকারীদের গ্রেফতার করলেও তাদের কারাগারে বেশিদিন আটকে রাখা যায় না।’
 
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের উপপরিচালক শামীম আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘ড্যান্ডিকে মাদক হিসেবে বিবেচিত করা হয় না। এ কারণে ড্যান্ডি সেবনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া যাচ্ছে না। মূলত ছন্নহারা শিশু-কিশোররাই ড্যান্ডিতে বেশি আসক্ত। এতে বয়স্কদের হার কম।’ তিনি আরও জানান, নেশামাত্রই ক্ষতিকারক। এটা দীর্ঘদিন ব্যবহারে শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে। হয়তো দেখা যাবে ড্যান্ডি আসক্ত শিশু পর্যায়ক্রমে অন্য মাদকের দিকে আসক্ত হতে পারে। তাই শিশুদের এ নেশা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে।

সরেজমিন দেখা গেছে, কোতোয়ালি থানা সংলগ্ন ফুটপাত ছাড়াও সিডিএ ভবনের সামনের ফুটপাত, চট্টগ্রাম আদালত ভবন এলাকা, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে, রেলস্টেশনসংলগ্ন এলাকা, লালদীঘির পাড় এলাকা, শাহ আমানত (রহ.) মাজারের সামনেসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে কিছু লোক গাঁজাসহ মাদক সেবনে দেখা যায়। এমনকি তারা পাগল ও মাতালের ছদ্মবেশে মাদক ব্যবসা করছে বলেও স্থানীয়রা জানান।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, গত দু’মাস আগেও শাহ আমানত মাজার গেটের সামনের ফুটপাত থেকে গাঁজাসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। গাঁজা উদ্ধার করা হয় বিআরটিসিসংলগ্ন ফুটপাত থেকেও।