এমন হত্যাকাণ্ড যুদ্ধাপরাধ : অ্যামনেস্টি

Post Image

বিক্ষোভকারী ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় বেড়েই চলছে হতাহতের সংখ্যা। একদিকে বিক্ষোভের উত্তাল গর্জন অন্যদিকে নিহতের স্বজনের আহাজারী। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৫ জনে আর আহতদের সংখ্যা ২৪'শ ছাড়িয়ে গেছে।

জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস খোলাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠা গাজায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

এদিকে গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভে ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ড মানবাধিকারের সর্বোচ্চ লঙ্ঘন। সেখানে ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ডের যে ঘটনা ঘটছে, তা যুদ্ধাপরাধ বলে জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

এ ছাড়া এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইরান ও রাশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন।

জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস উদ্বোধনের সময়ে গাজায় বিক্ষোভে ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে ৫৫ জন নিরপরাধ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে দুই হাজার ৪০০ ফিলিস্তিনি আহত হন।

২০১৪ সালে গাজা যুদ্ধের পর এটিকে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইসরাইলি স্নাইপাররা আট শিশুকেও নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে। যাদের বয়স ১৬ বছরের নিচে।

শুক্রবার ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভে হাজার হাজার লোক অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন ইসরাইলি সীমান্ত বেড়া অতিক্রম করার চেষ্টা করেছিলেন।

অ্যামনেস্টির মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব ও উত্তর আফ্রিকাবিষয়ক গবেষণা এবং অ্যাডভোকেসিপ্রধান ফিলিপ লুথার বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে এই রক্তক্ষয়ী হামলা মানবাধিকারের ঘৃণ্য লঙ্ঘন। অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে ইসরাইলি বাহিনীর তাজা গুলির ব্যবহার ও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের আরেকটি ভয়াবহ ঘটনার উদহারণ এটি।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচও এই হত্যাকাণ্ডকে 'রক্তগোছল' আখ্যায়িত করে এর নিন্দা জানিয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মঘারিনি সবাইকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ইসরাইলের গুলিতে শিশুসহ কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হন আরও শত শত। আমরা প্রত্যাশা করছি, জীবনের ক্ষয় এড়াতে সর্বোচ্চ সংযমের সঙ্গে সবাই কাজ করবেন।

নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীর সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আব্দুল্লাহর সঙ্গে এক ফোনালাপে তিনি এ নিন্দা জানান।

শান্তি চেষ্টা সফল করতে বিপর্যয়কর কার্যক্রম এড়িয়ে যেতে সবাইকে ধৈর্য ও সংযম অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের বিরুদ্ধে রাশিয়া প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছে।

হতাহতদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিক, গণমাধ্যম ও শিশুও আছে, যা অমার্জনীয় বলে মন্তব্য করেছেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড।

কুয়েত জাতিসংঘের জরুরি বৈঠকের ডাক দিলেও ভেটো ক্ষমতার অধিকারী যুক্তরাষ্ট্র তা আটকে দিয়েছে। জাতিসংঘে কুয়েতের রাষ্ট্রদূত মানসুর আল ওতাবি বলেন, যা ঘটেছে, আমরা তার নিন্দা জানাচ্ছি।

নিহতদের শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত করে এই বর্বরতার বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।